পাতা:ভারতকোষ - প্রথম খণ্ড.pdf/৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
অদ্ভুতাচার্য
অদ্বৈত আচার্য

9 M. Winternitz, History of Indian Literature, vol. I, Calcutta, 1927.

তারাপ্রসন্ন ভট্টাচার্য

অভূতাচার্য অদ্ভুত রামায়ণ নামক বাংলা রামায়ণগ্রন্থের রচয়িতা। ইহার প্রকৃত নাম নিত্যানন্দ। ইনি যােড়শ শতকের শেষভাগে পাবনা জেলায় আবির্ভূত হইয়াছিলেন। এক সময়ে উত্তর ও পূর্ব বঙ্গে এই রামায়ণ প্রভূত জনপ্রিয়তা লাভ করিয়াছিল। প্রচলিত রামায়ণে অদ্ভুত রামায়ণের অনেক অংশ অন্তভুক্ত হইয়াছে বলিয়া মনে হয়।

তারাপ্রসন্ন ভট্টাচার্য

অদ্বয়বজ্র আচার্য অদ্বয়ব ছিলেন খ্ৰীষ্টীয় দশম শতাব্দীর একজন প্রসিদ্ধ সিদ্ধাচার্য। তাহার আর এক নাম ছিল ‘অবধূতী-পা। আচার্য অদ্বয়বজ বাঙালী ছিলেন। উত্তরবঙ্গের দেবী-কোটবিহারের সহিত তাহার নাম জড়িত আছে। তিব্বতী ঐতিহাসিক তারনাথ অদ্বয়বজ্রকে রাজা মহীপাল, দীপংকর, নরো-পা প্রভৃতির সমসাময়িক বলিয়াছেন। বজ্রযানের বহু মূল্যবান গ্রন্থ তিনি প্রণয়ন করিয়াছিলেন। তাহার একুশটি রচনা ‘অদ্বয়বজ সংগ্রহ নামে প্রকাশিত হইয়াছে। গ্রন্থপ্রণয়ন ছাড়া তিনি কিছু কিছু গ্রন্থ তিব্বতী ভাষায় অনুবাদ করিয়াছিলেন।

Advayavajra Samgraha, Baroda, 1927; B. Bhattacharya, Sadhanamala, Baroda, 1928; Schiefner, Geschichte des Buddhismus, St. Petersburg, 1869.

বিশ্বনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়

অদ্বৈতচরণ আঢ্য (১৮১৩-১৮৭৩ খ্র) কলিকাতা আমড়াতলা আঢ্য বংশে জন্ম। অদ্বৈতচরণ ফোর্ট উইলিয়ম অস্ত্রাগারের (arsenal) হিসাব রক্ষক ছিলেন। ইহা ব্যতীত ইনি ব্যবসায়ী ও সাহিত্যামােদী ছিলেন। কনিষ্ঠ ভ্রাতা উদয়াদ আঢ্য বিদেশে গমন করিলে ‘সংবাদপূর্ণচন্দ্রোদয় পত্রের সম্পাদনার ভার গ্রহণ করেন ও ৩৩ বর্ষকাল ইহার সম্পাদক ছিলেন। তাহার সময়ে ইহা দৈনিকে পরিণত হয়। বহু ইংরেজী ও সংস্কৃত গ্রন্থের অনুবাদ এবং গ্রন্থ সম্পাদন ও প্রকাশ করিয়া তিনি বঙ্গসাহিত্যের সেবা করিয়াছেন। দ্র সুবর্ণবণিক কথা ও কীর্তি, ৩য় খণ্ড, কলিকাতা, ১৯৪২।


অদ্বৈতদাস পণ্ডিত বাবাজী (১৮৩৫-১৯২৯ খ্ৰী) সুপ্রসিদ্ধ বৈষ্ণব পণ্ডিত ও কীর্তনগায়ক। ইনি শ্ৰীবৃন্দাবনে কীর্তন
শিক্ষা আরম্ভ করেন এবং বহু স্থান হইতে দীর্ঘকাল ধরিয়া শিক্ষা করিয়া মনােহরসাহী কীর্তনে অসাধারণ দক্ষতা লাভ করেন। পণ্ডিত বাবাজী মহাশয় হরিনামামৃত ব্যাকরণ ও শ্রীমদ্ভাগবত অধ্যাপনা করিতেন। ৭৬ বছর বয়সে ইনি নব্যন্যায় পড়িবার জন্য নবদ্বীপে আসেন ও তিন বৎসর ধরিয়া আশুতােষ তর্কভূষণের নিকট শিক্ষালাভ করিয়া বৃন্দাবনে ফিরিয়া যান।
বিমানবিহারী মজুমদার

অদ্বৈত আচার্য শ্রীচৈতন্যের জন্মের পূর্বেই ইনি ভক্তি ও পাণ্ডিত্যের জন্য খ্যাতিলাভ করিয়াছিলেন। শ্রীচৈতন্যের পরম গুরু মাধবেন্দ্র পুরীর ইনি শিষ্য। শ্রীহট্টের লাউড় গ্রামে বারেন্দ্র ব্রাহ্মণকুলে ইহার জন্ম। পরে শান্তিপুরে আসিয়া বসবাস করেন। নবদ্বীপেও ইহার একটি বাড়ি ছিল। নবদ্বীপের ভক্তদের ইনিই প্রধান অবলম্বন ছিলেন।

নিমাই গয়া হইতে ভাবসম্পদ লইয়া ফিরিয়া আসিবার কয়েকমাস পরে ভক্তগণ তাঁহাকে স্বয়ং ভগবান্ বলিয়া পূজা করিতে আরম্ভ করেন। তখন প্রবীণ পণ্ডিত অদ্বৈত আচাৰ্যই সর্বপ্রথম বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণ করিয়া শ্রীগৌরাঙ্গের চরণে সচন্দন তুলসীপত্র দিয়া প্রণাম করেন।

অদ্বৈতের দুই স্ত্রী শ্রী ও সীত। সীতাদেবীর গর্ভে পাঁচটি (অথবা ছয়টি) পুত্র জন্মে। তাহাদের নাম অচ্যুত, কৃষ্ণদাস, গোপাল, বলরাম ও জগদীশ। শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতের কোনও কোনও পুথিতে এবং অদ্বৈতবিলাস গ্রন্থে স্বরূপ নামে আর একটি পুত্রের উল্লেখ দেখা যায়। ইহাদের মধ্যে অচ্যুত বাল্যকাল হইতেই শ্রীচৈতন্যের পরম ভক্ত ছিলেন।

অদ্বৈতপ্রভু পুরীতে রথযাত্রা উপলক্ষে সমাগত লক্ষ লক্ষ লোকের মধ্যে শ্রীচৈতন্যের অবতারত্ব ঘােষণার উদ্দেশ্যে ভক্তগণের দ্বারা স্বরচিত স্তব কীর্তন করান।

১৫১৩ খ্ৰীষ্টাব্দে শ্রীচৈতন্য যখন শান্তিপুরে আসেন তখন অদ্বৈত আচার্য বিদ্যাপতির পদ গাহিয়া তাহাকে অভ্যর্থনা করিয়াছিলেন। অদ্বৈতপ্রভু লােকাচার অপেক্ষা ভক্তিকে প্রাধান্য দিতেন। তাই যবন হরিদাসকে তিনি শ্রাদ্ধের অগ্রভাগ প্রদান করিয়াছিলেন। আত্মমহিমা প্রচারেও তিনি বীতস্পৃহ ছিলেন। একদল ভক্ত শ্ৰীচৈতন্যের পরিবর্তে তাহাকে অবতার বলিয়া প্রচার করিতে উদ্যোগী হইলে অদ্বৈত আচার্য তাহাদিগকে উৎসাহ দেন নাই। পরবর্তীকালে ‘অদ্বৈতপ্রকাশ’, ‘বাল্যলীলাসূত্র’, ‘অদ্বৈত
৪৪