পাতা:ভারতকোষ - প্রথম খণ্ড.pdf/৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
অনন্ত

শব্দ গান-বাজনার শব্দ শিয়াল কুকুর গাধা উট প্রভৃতির বিকট শব্দ কানে আসিলেই অনধ্যায়। অধ্যয়নের সময় গুরু-শিষ্যের মধ্য দিয়া কোনও জন্তু চলিয়া গেলে অধ্যায়ের বিধান ছিল। অনেক লােক একত্র সমবেত হইলে অর্থাৎ উৎসব উপলক্ষে অনধ্যায় হইত। কোনও বিশিষ্ট ব্যক্তি গুরুগৃহে আসিলে তাহার সম্মানের জন্য শিষ্টানধ্যায় পালন করা হইত। বাড়িতে অতিথি আসিলে তিনি চলিয়া না যাওয়া পর্যন্ত অনধ্যায়। রাজার পুত্র জন্মগ্রহণ করিলে দুই দিন অনধ্যায়। গ্রামের মধ্যে কাহারও মৃত্যু হইলে মৃতের সংকার না হওয়া পর্যন্ত অধ্যয়ন নিষিদ্ধ ছিল। অপবিত্র অবস্থায়, কাৰ্যান্তরে ব্যস্ত থাকাকালে ও শ্মশানসমীপে অধ্যয়ন বিধেয় নহে।।

দ্ৰ মনুসংহিতা, ৪।১০১ প্রভৃতি; P. V. Kane, History of Dharmasastra, vol. II, Poona, 1941.

চিন্তাহরণ চক্রবর্তী

অনন্ত শব্দার্থ অনুসারে যাহার অন্ত বা শেষ নাই তাহাই অনন্ত, যেমন গােলাকার বা বলয়াকার বস্তু। কিন্তু গণিতে অনন্ত একটি বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হয়। কোনও সংখ্যা কল্পনীয় বৃহত্তম সংখ্যা হইতে বৃহত্তর হইলে তাহা অনন্ত। মনে করা যাউক, ক-এর মান খ গ ভগ্নাংশের সমান। গ-এর মান যেমন হ্রাস পাইবে ক-এর মান সেই অনুসারে বৃদ্ধি পাইবে। গ হ্রাস পাইতে পাইতে শূন্যের নিকটবর্তী হইলে ক-এর মান অনন্তে পৌছিবে। ইহার প্রতীক । অনন্তের মান পরিমাপ বা গণনা করিয়া পাওয়া সম্ভব নহে। তৎসত্ত্বেও দুইটি অনন্ত রাশির তুলনা করা যায়। একটি সমষ্টির প্রত্যেকটি পৃথক সত্তার সহিত অপরের একৈক মিল করা যাইতে পারে। সর্বাংশে মিলিয়া গেলে দুইটির মান সমান। গণিতবিৎ গেয়র্গ কাণ্টর অনন্তের গণিতে নবযুগের প্রবর্তন করিয়াছেন। এই গণিতে হিব্রু বর্ণমালার প্রথম অক্ষর আলেফ অনন্তের প্রতীক রূপে। ব্যবহৃত হইয়াছে। সকল মূল সংখ্যা ও ভগ্নাংশের সমষ্টি ক্ষুদ্রতম অনন্ত রাশি। কোনও রেখায় বা তলে বিন্দুর সমষ্টি ইহা অপেক্ষা বৃহত্তর । সকল জ্যামিতিক বক্রের সমষ্টি বৃহত্তম অনন্ত রাশি।

সুধাংশু প্রকাশ চৌধুরী অনন্ত আচার্য বৃন্দাবনদাসের বৈষ্ণববন্দনায় ইহাকে নবদ্বীপবাসী বলা হইয়াছে। ইনি শ্রীচৈতন্যের সমসাময়িক। পদকল্পতরুর ২২৮৫ সংখ্যক পদটি ইহার রচনা। ইনি ।
অনন্ত কলী

গদাধর পণ্ডিতের শিষ্য। পরে বৃন্দাবনে যাইয়া গােবিন্দের সেবাধিকারী হইয়াছিলেন। অনন্তদাস-ভণিতায় পদকল্পতরুতে যে ৩২টি পদ ধৃত হইয়াছে তাহা ইহার রচনা হইতেও পারে, আবার অদ্বৈত প্রভুর শাখাভুক্ত অনন্তদাসের রচনা হওয়াও অসম্ভব নহে। বিমানবিহারী মজুমদার অনন্ত কন্দলী অনন্ত কন্দলী অসমীয়া সাহিত্যের সুপ্রসিদ্ধ কবি। ইনি মহাপুরুষ শংকরদেবের সমসাময়িক ছিলেন। | যােড়শ শতাব্দীর প্রথম দুই দশকের ভিতর (১৫০| ১৫২০ খ্রী) জন্মগ্রহণ করিয়া যােড়শ শতাব্দীর শেষভাগ পর্যন্ত তিনি জীবিত ছিলেন বলিয়া পণ্ডিতেরা অনুমান করেন। বৃত্রাসুর বধ কাব্যে তিনি যে আত্মপরিচয় দিয়াছেন, তাহা হইতে জানা যায়, তাঁহার বাড়ি ছিল আসামের হাজো গ্রামে। তাঁহার পিতা রত্ন পাঠক ভাগবত শাস্ত্রে সুপণ্ডিত ছিলেন ও হাজো-র মাধব দেবালয়ের পাঠক ছিলেন। অনন্ত কন্দলীর আদি নাম হরিচরণ। অনন্ত কনলী ছাড়া শ্ৰচন্দ্রভারতী, ভাগবতাচার্য, ভাগবত ভট্টাচার্য, মধুভারতী ইত্যাদি নামেও তাহাকে অভিহিত করা হইত। তর্কশাস্ত্রে সুপণ্ডিত হইলেও তাঁহার পিতার নিকট ভাগবত শ্রবণ করিয়া ও তাঁহার পিতার প্রভাবে ক্রমে ভক্তিতে তাহার মতি হয়। স্ত্রীলােক ও শূদ্রের। যাহাতে ভক্তিরস আস্বাদন করিতে পারে এইজন্য তিনি অসমীয়া ভাষায় | কাব্যাদি রচনা করিতে আরম্ভ করেন। | অনন্ত কন্দলী মহাপুরুষ শংকরদেবের সংস্পর্শে আসেন ও তাহার দ্বারা বিশেষ ভাবে প্রভাবিত হন। মহাপুরুষ শংকরদেবের উপদেশানুসারেই তিনি ভাগবতের দশম স্কন্ধের মধ্য ও শেষ ভাগ অসমীয়া ভাষায় অনুবাদ করিয়াছিলেন বলিয়া জানা যায়। মহাপুরুষ শংকরদেব নিজে ভাগবতের দশম স্কন্ধের প্রথম ভাগ (দশম) অনুবাদ করিয়াছিলেন। | অনন্ত কন্দলীর রচিত গ্রন্থাবলীর মধ্যে রামায়ণ, ‘কুমর হরণ’, ভাগবতের ষষ্ঠ স্কন্ধ অবলম্বনে লিখিত ‘বৃত্রাসুর বধ’, ভাগবতের দশম স্কন্ধের মধ্য ও শেষ দশম’, ‘মহীরাবণ বধ কাব্য ও ‘সীতার পাতাল প্রবেশ নাটক বিশেষ উল্লেখযােগ্য। এই ‘মধ্য ও শেষ দশম’ অনন্ত কন্দলীর অক্ষয় কীর্তি। দ্র সত্যেন্দ্রনাথ শর্মা, অসমীয়া সাহিত্যের ইতিবৃত্ত, ৩য় সংস্করণ, গৌহাটি, ১৯৬৩।

কৃষ্ণময় ভট্টাচার্য
৪৮