পাতা:ভারতকোষ - প্রথম খণ্ড.pdf/৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

________________

অনাথপিণ্ডিক একটি ধারার ঐক্য সেই ধারার অন্তর্ভুক্ত ক্ষণিক পদার্থগুলির কার্যকারণ সম্বন্ধ এবং এক হইতে অপরে উৎপন্ন সংস্কার দ্বারা নিরূপিত। অতএব দেখা যাইতেছে, নৈরাত্মবাদ বহুলাংশে ক্ষণিকবাদের উপর নির্ভরশীল। বৌদ্ধগণ বহুবিধ যুক্তির সাহায্যে। এই ক্ষণিকবাদ স্থাপন করিবার চেষ্টা করিয়াছেন। এই যুক্তিগুলির মধ্যে সত্তা এবং প্রত্যক্ষের স্বরূপের উপর ভিত্তি। করিয়া যে দুইটি যুক্তি দেওয়া হইয়াছে সেই দুইটি বিশেষরূপে উল্লেখযােগ্য। ইওরােপে কার্ল মাক্সের ( ১৮১৮-১৮৮৩ খ্র) জড়বাদ চার্বাক-মতের সহিত এবং ডেভিড হিউমের (১৭১১১৭৭৬ খ্ৰী ) মতবাদ বৌদ্ধমতের সহিত বহুলাংশে তুলনীয়। ‘কর্মবাদ’ ও ‘ক্ষণিকবাদ’ দ্র। ঐ ফণিভূষণ তর্কবাগীশ, ন্যায়দর্শন ও বাৎস্যায়ন ভাষ্য, ৩য় খণ্ড, ১৩৪৬ বঙ্গাব্দ ; দক্ষিণারঞ্জন শাস্ত্রী, চার্বাক দর্শন, কলিকাতা, ১৩৬৬ বঙ্গাব্দ ; দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, লােকায়ত দর্শন, কলিকাতা, ১৩৬: বঙ্গাব্দ ; অনন্তকুমার ভট্টাচার্য ন্যায়তর্কতীর্থ, বৈভাষিক দর্শন, কলিকাতা, ১৩৬১ 75772; T. W. Rhys Davids, Buddhism, New York, 1907 ; H. Oldenberg, Buddha, His Life, His Doctrine, His Order, London, 1882 ; F. T. Stcherbatsky, Buddhist Logic, vol. 1, Leningrad, 1930 ; S. Radhakrishnan, Indian Philosophy, vol. 1, London, 1923; M. Hiriyanna, Outlines of Indian Philosophy, London, 1932 ; T. R. V. Murti, The Central Philosophy of Buddhism, London, 1955. প্রণবকুমার সেন অনাথপিণ্ডিক সংস্কৃত অনাথপিণ্ডদ। শ্রাবস্তীর একজন শ্ৰেষ্ঠী ছিলেন। বুদ্ধত্ব লাভের প্রথম বৎসরেই রাজগৃহে বুদ্ধের সহিত তাহার সাক্ষাৎ হয়। বুদ্ধের বাণী শুনিয়া তিনি শ্রোতাপন্ন হন। কোশল রাজকুমার জেত-র উদ্যানভূমি আঠার কোটি মুদ্রায় আচ্ছাদিত করিয়া সেই অর্থে তাহা তিনি ক্রয় করেন এবং সমপরিমাণ অর্থে একটি বিহার নির্মাণ করাইয়া আরও আঠার কোটি মুদ্রা সমেত জেতবনারাম বুদ্ধ ও সংঘকে নিবেদন করিয়া তিনি দানধর্ম পালন করেন। বুদ্ধ ও সংঘের উদ্দেশ্যে তিনি সর্বদাই মুক্তহস্তে দান করিতেন। অনাথপিণ্ডিক দিনে দুইবার করিয়া তথাগতকে দর্শন করিতে যাইতেন। কিন্তু বুদ্ধ পরিশ্রান্ত হইতে পারেন এই আশঙ্কায় তিনি কখনও

________________

অনার্য তাঁহাকে প্রশ্ন করিতেন না। পাঁচশত অতিথি ও একশত ভিক্ষুকে তিনি প্রত্যহ আহার্য প্রদান করিতেন। অপরিমিত দানের ফলে শেষ বয়সে তিনি দারিদ্র্যগ্রস্ত হইয়াছিলেন। তাহার প্রকৃত নাম ছিল সুদত্ত। দানশীলতার জন্যই তিনি অনাথপিণ্ডিক এবং দাতাদিগের অগ্রণী বলিয়া আখ্যাত হইয়াছিলেন। অনাথপিণ্ডিকের পুত্রবধূ সুজাতা ধনঞ্জয় শ্ৰেষ্ঠীর কন্যা ও বিশাখার কনিষ্ঠা ভগিনী ছিলেন। বুদ্ধ অনাথপিণ্ডিকের তর্কশক্তির বিশেষ সুখ্যাতি করিতেন। G. P. Malalasekera, Dictionary of Pali Proper Names, vol. 1, London, 1937. | লক্ষ্মণচন্দ্র সেনগুপ্ত অনার্য ভারতের যে প্রাচীন অধিবাসীগণ বেদ রচনা করেন তাঁহারা আর্য নামে পরিচিত। বর্তমান কালের উচ্চ শ্রেণীর হিন্দুরা আর্যগণের বংশধর বলিয়া দাবি করেন। ইহা ভিন্ন ভারতের অন্যান্য অধিবাসীদের বলা হয় অনার্য। সুতরাং অনার্য কোনও একটি বিশিষ্ট জাতি বা শ্রেণীকে বুঝায় না- আর্য ব্যতীত অন্য ভারতবাসীর সাধারণ সংজ্ঞা মাত্র। | আর্যগণ ভারতে আসিবার বহু পূর্ব হইতেই অনেক জাতির লােক এ দেশে বাসস্থাপন করিয়াছিল। তাহাদের কোনও লিখিত বিবরণ নাই। তবে নানা উপায়ে তাহাদের কিছু বিবরণ সংগ্রহ করা হইয়াছে। তাহাদের ব্যবহৃত কতকগুলি প্রস্তরনির্মিত দ্রব্য পাওয়া গিয়াছে। ইহার নির্মাণ কৌশল ক্রমশ উন্নতি লাভ করে। এই অনুসারে প্রাচীন প্রস্তরযুগ, নব্য প্রস্তরযুগ প্রভৃতি নামকরণ হইয়াছে। অনেকগুলি পর্বতগুহাগাত্রে এই সকল যুগের অঙ্কিত চিত্র আছে তাহা হইতে ইহাদের জীবনযাত্রার কতক পরিচয় পাওয়া যায়। খুব | প্রাচীনকালের অধিবাসীরা ঐ সব প্রস্তর দিয়া পশু হত্যা | করিত এবং তাহার কাচা মাংস খাইয়া জীবনধারণ করিত। তাহারা আগুনের ব্যবহার, কৃষিকাৰ্য, গৃহনির্মাণ, ধাতুর ব্যবহার প্রভৃতি জানিত না। ক্রমে ক্রমে তাহারা এই সকল বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে এবং মাটির বাসন তৈয়ারি করিতেও শেখে। সিন্ধুনদের উপত্যকায় এক বা একাধিক | জাতি বাস করিত যাহারা লৌহ ব্যতীত অন্যান্য ধাতুর ব্যবহার জানিত এবং নানা বিষয়ে উচ্চস্তরের সভ্যতার অধিকারী ছিল। দ্রাবিড় জাতির পূর্বপুরুষগণও সভ্যতা ও সংস্কৃতির দিক দিয়া খুব উন্নত ছিল।

আর্যগণ ভারতে আসিয়া এই সব প্রাচীন জাতিকে পরাজিত করেন এবং তাহাদের বাসভূমি দখল করেন।
৫৩