পাতা:ভারতপথিক রামমোহন রায়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

এদের অঙ্গীভূত ক’রে নেবার প্রাণশক্তি যদি ভারতের না থাকে, পাথরের মতো কঠিন পিঞ্জীভূত হয়ে এদের বাইরে ঠেকিয়ে রাখাই যদি আমাদের ধর্ম হয়, তবে সেই পুঞ্জ পুঞ্জ অসংশ্লিষ্ট অনাত্মীয়তার নিদারুণ ভার সইবে কে?

 প্রতিদিন কি এরা স্খলিত হয়ে পড়ছে না দলে দলে? সমাজের নীচের স্তরে কি গর্ত প্রসারিত হচ্ছে না? আপনার লোক যখন পর হয়ে যায় তখন সে যে নিদারুণ হয়ে ওঠে, তার কি প্রমাণ পাচ্ছি নে? যাদের অবজ্ঞা করি তাদের আলগা করে রাখি, যাদের ছুঁই নে তাদের ধরতে পারি নে। আপনাকে পর করবার যে সহস্র পথ প্রশস্ত করে রেখেছি, সেই পথ দিয়েই শনিব যত চর দেশে প্রবেশ করেছে। আমাদের বিপুল জনভরণীর তক্তাগুলিকে সাবধানে ফাঁক ফাঁক ক’রে রাখাকেই যদি ভারতের চিরকালীন ধর্ম ব’লে গণ্য করি, তা হলে বাইরের তরঙ্গগুলোকে শত্রু ঘোষণা ক’রে কেন মিছে বিলাপ করা? তা হলে বিনাশের লবণাশ্রুসমুদ্রে তলিয়ে যাওয়াকেই ভারত–ইতিহাসের চরম লক্ষ্য ব’লে নিশ্চেষ্ট থাকাই শ্রেয়। সেচনী দিয়ে ক্রমাগত জল সেঁচে সেঁচে কতদিন চলবে আমাদের জীর্ণ ভাগ্যের তরী বাওয়া?

 আমাদের ইতিহাসের আধুনিক পর্বের আরম্ভকালেই এসেছেন রামমোহন রায়। তখন এ যুগকে কি বিদেশী কি স্বদেশী কেউ স্পষ্ট করে চিনতে পারে নি। তিনিই সেদিন বুঝেছিলেন এ যুগের যে আহ্বান সে সুমহৎ ঐক্যের আহ্বান।

১৯