পাতা:ভারতবর্ষে.djvu/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



১৮
ভারতবর্ষে।

সমভিব্যাহারে ভিক্ষার্থ বহির্গত হয়। উহারা মুখ ফুটয়া কিছুই চাহে না—কেবল লোকের দ্বারে স্তব্ধভাবে দাঁড়াইয়া থাকে। গৃহে প্রত্যাগত হইয়া, নবব্রতী ভিক্ষু গুরুর চরণ প্রক্ষালন করে, কমণ্ডলু ধৌত করে, চাউল সিদ্ধ করে এবং বুদ্ধের বিষয়—বুদ্ধের দয়া ও ঔদার্য্যের বিষয় চিন্তা করে। এক ঘণ্ট। পরে, একটি প্রদীপ জ্বালাইয়া শিক্ষাগৃহে প্রবেশ করে—পুরাতন পাণ্ডুলিপির নকল করে, কিম্বা গুরুর পদতলে বসিয়া তাঁহার উপদেশ-বাক্য শ্রবণ করে এবং দিনের মধ্যে যে সকল দোষ করিয়াছে তাহা তাঁহার নিকট প্রকাশ করে। পুরোহিত-শ্রেণীর বৌদ্ধদিগকে কোনপ্রকার শারীরিক শ্রম করিতে হয় না; তাঁহারা ধ্যান ধারণায় অনেকটা সময় নিয়োগ করিতে পারে; কিন্তু তাহারা প্রার্থনা করে না; কারণ, বৌদ্ধধর্ম্ম, কোন দেবতার সাহায্য চাহে না। দুঃখকষ্ট হইতে অব্যাহতি পাইবার জন্য উহারা নিজের উপরেই নির্ভর করে। স্পিনোজা ও ষ্ট্রোয়িক-সম্প্রদায় যে উপায় অবলম্বন করিতে উপদেশ দিয়াছেন ইহারাও সেই উপায় অবলম্বন করিয়া থাকে। সর্ব্বপ্রকার জীবের সমষ্টিকে ধ্যান করিবার জন্য ইহারা ক্ষণস্থায়ী ‘আমি’-কে ভুলিয়া যায়। পাঁচ প্রকার ধ্যানের দ্বারা ইহারা সমস্ত জগৎকে চিন্তা করে। প্রথম ধ্যান, ‘মুক্তি-ভাবনা’। সমস্ত কষ্ট, রিপুর উদ্বেগ, অসৎ বাসনা হইতে মুক্ত হইলে আমি যেমন নিজে সুখী হইতে পারি বলিয়া মনে করি, সেইরূপ সমস্ত জগতের জীব ঐ প্রকারে সুখী হউক্ এই কামনা করা প্রথম ধ্যানের বিষয়। এমন কি, শক্র হইলেও কেবল তাহার গুণের ভাগ গ্রহণ করিয়া, আমি যে সুখ নিজে চাহি, সে সুখ যেন সেও পায় এইরূপ কামনা অকপট ভাবে করিতে হইবে।

 দ্বিতীয় ধ্যান—‘করুণা ভাবনা’। সমস্ত জীব যে কষ্টযন্ত্রণা