পাতা:ভারতবর্ষে.djvu/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪০
ভারতবর্ষ।

ন্যায়, আমিও অন্যের নিকট স্বপ্নবৎ।’ এই সেই অদ্ভূত অনুভূতি যাহা বংশপরম্পরায় চলিয়া আসিয়া, শুধু ব্রাহ্মণ্য-দর্শন কেন, ব্রাহ্মণ্য-সভ্যতাতেও কতকগুলি বিশেষ লক্ষণ প্রকটিত করিয়াছে। আমিয়েলের ‘আত্ম-প্রকাশ’ গ্রন্থে, ব্যবহারিক জীবনের একটি কথাও নাই। যেব্যক্তি বিশ্ব-আত্মাকে চিন্তা করে, পূর্ণস্বরূপে মনোনিবেশ করে আগন্তুক ক্ষুদ্র বিষয়-সকল কেমন করিয়া তাহার ভাল লাগিবে? যদি জগৎ মায়াই হইল তবে এরূপ জগতে ভাল স্থান অনুসন্ধান করিবার আবশ্যকতা কি? যদি দৃশ্যমান বাস্তব জগতে আমার কোন আস্থা না থাকে, দৃশ্যমান বাস্তব জগৎও আমাকে আর স্থান দেয় না। ভারতবর্ষে ত ইহার ফল প্রত্যক্ষ দেখা যায়। দর্শন ও জ্যোতিষশাস্ত্র ব্যতীত হিন্দুদিগের আর কোন বিজ্ঞান নাই। প্রকৃতির নিয়ম ও তথ্য অনুসন্ধানে গ্রীকদিগের ন্যায় হিন্দুদিগের কোন কৌতুহল ছিল না; কতকগুলি উপনিষদ্‌ মনে হয়, বাতুলের লেখা, বালকের লেখা। তাহাতে কুকুরেরা ও পক্ষীরা তর্কবিতর্ক করিতেছে, দর্শনশাস্ত্রের আলোচনা করিতেছে, তাহাতে ইতিহাসের কথা আদৌ নাই। এই বৃহদায়তন সাহিত্য কেবল স্বপ্ন ও দর্শনের জটিলতায় পূর্ণ। কোন একটি ঘটনার তারিখ, কোন গম্ভীর বিষয়ের উপাখ্যান বা কোন বংশাবলীর কথা ইহাতে কিছুই নাই। আসিয়ার বড় বড় ধর্ম্মমূলক ঘটনার বিষয় যাহা কিছু জানা যায় তাহা প্রায়ই চীন পরিব্রাজকদিগের নিকট হইতে। বৌদ্ধধর্ম্ম কখন্‌ ভারতে আরম্ভ হইল, কখনই বা ভারত হইতে অন্তৰ্হিত হইল কিছুই জানিতে পারা যায় না। সত্যই যদি সমাজ ও সমাজের সভ্যতা—(যেমন আমিয়েল বলেন, আত্মার মূর্ত্তিমান স্বপ্নমাত্র,) ব্রহ্মসাগরে উৎক্ষিপ্ত ক্ষণস্থায়ী তরঙ্গমাত্র, তবে এমন বাতুল কে আছে যে, সভ্যতার ইতিহাস, সমাজের ইতিহাস লইয়া মস্তিষ্ক আলোড়ন করিবে?