ধ্রুবতর আশ্রয়স্থল, এ নাস্তিকতাকে যেন আমরা প্রশ্রয় না দিই। আত্মত্যাগ যদি স্বার্থের উপর জয়ী না হইত, তবে আমরা চিরদিন বর্ব্বর থাকিয়া যাইতাম। এখনও বহুলপরিমাণে বর্ব্বরতা পশ্চিমদেশে সভ্যতার নামাবলী পরিয়া বিচরণ করিতেছে বলিয়াই তাহাকে সভ্যতার অপরিহার্য্য অঙ্গস্বরূপে বরণ করিতে হইবে, আমাদের ধর্মবুদ্ধির এমন ভীরুতা যেন না ঘটে! য়ুরোপ আজকাল সত্যযুগকে উদ্ধতভাবে পরিহাস করিতেছে বলিয়া আমরা যেন সত্যযুগের আশা কোনকালে পরিত্যাগ না করি! আমরা যে পথে চলিয়াছি, সে পথের পাথেয় আমাদের নাই—অপমানিত হইয়া আমাদিগকে ফিরিতেই হইবে। দর্খাস্ত করিয়া এ পর্য্যন্ত কোন দেশই রাষ্ট্রনীতিতে বড় হয় নাই, অধীনে থাকিয়া কোন দেশ বাণিজ্যে স্বাধীন দেশকে দূরে ঠেকাইয়া রাখিতে পারে নাই—এবং ভোগবিলাসিতা ও ঐশ্বর্য্যের আড়ম্বরে বাণিজ্যজীবিদেশের সহিত কোন ভূমিজীবিদেশ সমকক্ষতা রাখিতে পারে নাই। যেখানে প্রকৃতিগত এবং অবস্থাগত বৈষম্য, সেখানে প্রতিযোগিতা অপঘাত মৃত্যুর কারণ। আমাদিগকে দায়ে পড়িয়া, বিপদে পড়িয়া, একদিন ফিরিতেই হইবে—তখন কি লজ্জার সহিত নতশিরে ফিরিব? ভারতবর্ষের পর্ণকুটীরের মধ্যে তখন কি কেবল দারিদ্র্য ও অবনতি দেখিব? ভারতবর্ষ যে অলক্ষ্য ঐশ্বর্য্যবলে দরিদ্রকে শিব, শিবকে দরিদ্র করিয়া তুলিয়াছিল, তাহা কি আধুনিক ভারতসন্তানের চাক্চিক্য-অন্ধ চক্ষে একেবারেই পড়িবে না? কখনই না। ইহা নিশ্চয় সত্য যে, আমাদের নুতন শিক্ষাই ভারতের প্রাচীন মাহাত্ম্যকে আমাদের চক্ষে নূতন করিয়া সজীব করিয়া দেখাইবে, আমাদের ক্ষণিক বিচ্ছেদের পরেই চিরন্তন আত্মীয়তাকে নবীনতর নিবিড়তার সহিত সমস্ত হৃদয় দিয়া সম্পূর্ণভাবে গ্রহণ করিতে পারিব। চিরসহিষ্ণু ভারতবর্ষ বাহিরের রাজহাট হইতে
পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১১
অবয়ব
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
বারোয়ারি-মঙ্গল।
১০৫
