পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১০৮
ভারতবর্ষ।

আমি এই বুঝি, তিনি সত্যই আমারি নহেন। বিশেষত বড়সাহেব যখন নিজেকে আমার বাধ্যতম ভৃত্য বলিয়া বর্ণনা করেন, তখন অনায়াসে সে কথাটার ষোল-আনা বাদ দিয়া তাহার উপরে আরো যোল-আনা কাটিয়া লইতে পারি। এগুলি বাঁধাদস্তুরের অত্যুক্তি, কিন্তু প্রচলিত ভাষাপ্রয়োগের অত্যুক্তি ইংরেজীতে ঝুড়িঝুড়ি আছে। Immensely, immeasurably, extremely, awfully, infinitely, absolutely, ever so much for the life of me, for the world, unbounded, endless প্রভৃতি শব্দ প্রয়োগগুলি যদি সর্ব্বত্র যথার্থভাবে লওয়া যায়, তবে প্রাচ্য অত্যুক্তিগুলি ইহজন্মে আর মাথা তুলিতে পারে না।

 বাহ্যবিষয়ে আমাদের কতকটা ঢিলামি আছে, এ কথা স্বীকার করিতেই হইবে। বাহিরের জিনিষকে আমরা ঠিক্‌ঠাক্‌মত দেখি না, ঠিক্‌ঠাক্‌মত গ্রহণ করি না। যখন-তখন বাহিরের নয়কে আমরা ছয় এবং ছয়কে আমরা নয় করিয়া থাকি। ইচ্ছা করিয়া না করিলেও এস্থলে অজ্ঞানকৃত পাপের ডবল্‌ দোষ—একে পাপ, তাহাতে অজ্ঞান। ইন্দ্রিয়কে এমন অলস এবং বুদ্ধিকে এমন অসাবধান করিয়া রাখিলে, পৃথিবীতে আমাদের দুটি প্রধান নির্ভরকে একেবারে মাটি করা হয়। বৃত্তান্তকে নিতান্ত ফাঁকি দিয়া সিদ্ধান্তকে যাহারা কল্পনার সাহায্যে গড়িয়া তুলিতে চেষ্টা করে, তাহারা নিজেকেই ফাঁকি দেয়। যে-যে বিষয়ে আমাদের ফাঁকি আছে, সেই-সেই বিষয়েই আমরা ঠকিয়া বসিয়া আছি। একচক্ষু হরিণ যে দিকে তাহার কাণা চোখ ফিরাইয়া আরামে ঘাস খাইতেছিল, সেই দিক্‌ হইতেই ব্যাধের তীর তাহার বুকে বাজিয়াছে। আমাদের কাণা চোখটা ছিল, ইহলোকের দিকে—সেই তরফ হইতে আমাদের শিক্ষা যথেষ্ট হইয়াছে। সেই দিকের ঘা খাইয়া আমরা মরিলাম! কিন্তু স্বভাব না যায় ম'লে!