পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১১০
ভারতবর্ষ

জলাশয়ের জল সমতল নহে, এ কথা যখন কেহ অম্লানমুখে বলে, তখন বুঝিতে হইবে, সে কথাটা অবিশ্বাস্ত হইলেও তাহার মনিব তাহাই শুনিতে চাহে। আজকালকার সাম্রাজ্যমদমত্ততার দিনে ইংরেজ নানা প্রকারে শুনিতে চায় আমরা রাজভক্ত,—আমরা তাহার চরণতলে স্বেচ্ছায় বিক্রীত। এ কথা জগতের কাছে তাহারা ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত করিতে চাহে।

 এদিকে আমাদের প্রতি সিকি-পয়সার বিশ্বাস মনের মধ্যে নাই; এত-বড় দেশটা সমস্ত নিঃশেষে নিরস্ত্র; একটা হিংস্র পশু শ্বারের কাছে আসিলে দ্বারে অর্গল লাগানো ছাড়া আর কোন উপায় আমাদের হাতে নাই—অথচ জগতের কাছে সাম্রাজ্যের বলপ্রমাণ উপলক্ষ্যে আমাদের অটল ভক্তি রটাইবার বেলা আমরা আছি! মুসলমান সম্রাটের সময় দেশনায়কতা-সেনানায়কতার অধিকার আমরা হারাই নাই;—মুসলমান সম্রাট যখন সভাস্থলে সামন্তরাজগণকে পার্শ্বে লইয়া বসিতেন, তখন তাহা শূন্যগর্ভ প্রহসনমাত্র ছিল না। যথার্থই রাজারা সম্রাটের সহায় ছিলেন, রক্ষা ছিলেন, সম্মানভাঙ্গন ছিলেন। আজ রাজাদের সন্মান মৌখিক, অথচ তাহাদিগকে পশ্চাতে টানিয়া লইয়া দেশে-বিদেশে রাজ ভক্তির অভিনয় ও আড়ম্বর তখনকার চেয়ে চারগুণ। হতভাগ্য রাজাগুলির এইটুকুমাত্র কাজ যখন ইংলণ্ডের সাম্রাজ্যলক্ষ্মী সাজ পরিতে বসেন, তখন কলনিগুলির সামান্ত শাসনকর্তার মাথার মুকুটে ঝলমল করেন; আর ভারতবর্ষের প্রাচীনবংশীয় রাজগণ র্তাহার চরণকুপুরে কিঙ্কিণীর মত আবদ্ধ হইয়া কেবল ঝঙ্কার দিবার কাজ করেন—এবারকার বিলাতী দরবারে তাহা বিশ্বজগতের কাছে জারি হইয়াছে! হায় জয়পুর যোধপুর-কোলাপুর, ইংরেজসাম্রাজ্যের মধ্যে তোমাদের কোথায় স্থান, তাহা কি এমন করিয়া দেশে-বিদেশে ঘোষণা করিয়া আসিবার জন্তই এত লক্ষ-লক্ষ টাকা