পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
অত্যুক্তি
১১১

বিলাতের জলে জলাঞ্জলি দিয়া আসিলে? ইংরেজের সাম্রাজ্য-জগন্নাথজীর মন্দিরে, যেখানে কানাডা, নিয়ুজিল্যাণ্ড, অষ্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা স্ফীত উদর ও পরিপুষ্ট দেহ লইয়া দিব্য হাঁক্‌ডাক্‌ সহকারে পাণ্ডাগিরি করিয়া বেড়াইতেছে, সেখানে কৃশজীর্ণতনু ভারতবর্ষের কোথাও প্রবেশাধিকার নাই—ঠাকুরের ভোগও তাহার কপালে অল্পই জোটে—কিন্তু যে দিন বিশ্বজগতের রাজপথে তাহার অভ্রভেদী রথ বাহির হয়, সেই একটা দিন রথের দড়া ধরিয়া টানিবার জন্য ভারতবর্ষের ডাক পড়ে। সেদিন কত বাহবা, কত করতালি, কত সৌহার্দ্দ্য—সেদিন কার্জ্জনের নিষেধশৃঙ্খলমুক্ত ভারতবর্ষীয় রাজাদের মণিমাণিক্য লগুনের রাজপথে ঝল্‌মল্‌ করিতে থাকে এবং লওনের হাঁসপতালগুলির 'পরে রাজভক্ত রাজাদের মুষলধারে বদান্ততাবৃষ্টির বার্ত্তা ভারতবর্ষ নতশিরে নীরবে শ্রবণ করে! এই ব্যাপারের সমস্তটা পাশ্চাত্য অত্যুক্তি। ইহা মেকি অত্যুক্তি—খাঁটি নহে!

 প্রাচ্যদিগের অত্যুক্তি ও আতিশষ্য অনেক সময়েই তাহাদের স্বভাবের ঔদার্ষ্য হইতেই ঘটিয়া থাকে। পাশ্চাত্য অত্যুক্তি সাজানে। জিনিষ, তাহ জাল বলিলেই হয়। দিল্‌দরাজ মোগলসম্রাট্‌দের আমলে দিল্লিতে দরবার জমিত। আজ সে দিল্‌ নাই, সে দিল্লি নাই, তবু একটা নকল দরবার করিতে হইবে। সংবৎসর ধরিয়া রাজারা পোলিটিকাল্‌ এজেণ্টের রাহুগ্রাসে কবলিত;–সাম্রাজ্যচালনায় তাহাদের স্থান নাই, কাজ নাই, তাহাদের স্বাধীনতা নাই—হঠাৎ একদিন ইংরেজসরকারের নায়েব, পরিত্যক্তমহিমা দিল্লিতে সেলাম কুড়াইবার জন্য রাজাদিগকে তলব দিলেন, নিজের ভূলুণ্ঠিত পোষাকের প্রান্ত শিখ্ ও রাজপুত রাজকুমারদের দ্বারা বহন করাইয়া লইলেন,—আকস্মিক উপদ্রবের মত একদিন একটা সমারোহের আগ্নেয় উচ্ছাস উদগীরিত হইয়া উঠিল,—তাহার পর সমস্ত শূন্য, সমস্ত নিম্প্রভ।