দরবারের বিপুল কার্পণ্যে ইংরেজের রাজমহিমা প্রাচ্যজাতির নিকট খর্ব্ব না হইয়া থাকিতে পারে না।
যে সকল কাজ ইংরেজী দস্তুরমতে সম্পন্ন হয়, তাহা আমারে প্রথার সঙ্গে না মিলিলেও সে সম্বন্ধে আমরা চুপ করিয়া থাকিতে বাধ্য। যেমন, আমাদের দেশে বরাবর রাজার আগমনে বা রাজকীয় শুভকর্ম্মাদিতে যে সকল উৎসব আমোদ হইত, তাহার ব্যয় রাজাই বহন করিতেন, প্রজারা জন্মতিথি প্রভৃতি নানাপ্রকার উপলক্ষ্যে রাজার অনুগ্রহ লাভ করিত। এখন ঠিক তাহার উল্টা হইয়াছে। রাজা জন্মিলে-মরিলে নড়িলে-চড়িলে প্রজার কাছে রাজার তরফ হইতে চাঁদার খাতা বাহির হয়, রাজা-রায়বাহাদুর প্রভৃতি খেতাবের রাজকীয় নিলামের দোকান জমিয়া উঠে। আকবর-শাজাহান্ প্রভৃতি বাদ্শারা নিজেদের কীর্ত্তি নিজেরা রাখিয়া গেছেন,—এখনকার দিনে রাজকর্ম্মচারীরা নানা ছলে নানা কৌশলে প্রজাদের কাছ হইতে বড় বড় কীর্ত্তিস্তম্ভ আদায় করিয়া লন। এই যে সম্রাটের প্রতিনিষি সূর্য্যবংশীয় ক্ষত্রিয় রাজাদিগকে সেলাম দিবার জন্য ডাকিয়াছেন, ইনি নিজের দানের দ্বারায় কোথায় দীঘি খনন করাইয়াছেন, কোথায় পান্থশালা নির্মাণ করিয়াছেন, কোথায় দেশের বিদ্যাশিক্ষা ও শিল্পচর্চ্চাকে আশ্রয় দান করিয়াছেন? সেকালে বাদশারা, নবাবরা, রাজকর্ম্মচারিগণও এই সকল মঙ্গলকার্য্যের দ্বারা প্রজাদের হৃদয়ের সঙ্গে যোগ রাখিতেন। এখন রাজকর্ম্মচারীর অভাব নাই—তাহাদের বেতনও যথেষ্ট মোটা বলিয়া জগদ্বিখ্যাত—কিন্তু দানে ও সৎকর্ম্মে এদেশে তাঁহাদের অস্তিত্বের কোন চিহ্ন তাঁহারা রাখিয়া যান না। বিলাতী দোকান হইতে তাঁহারা জিনিষপত্র কেনেন, বিলাতী সঙ্গীদের সঙ্গে আমোদ-আহ্লাদ করেন, এবং বিলাতের কোণে বসিয়া অন্তিমকাল পর্যন্ত তাঁদের পেন্সন্ সম্ভোগ করিয়া থাকেন।