পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
অত্যুক্তি।
১১৭

সাহেবী ছাড়িয়া নবাবী ধরে, তবে তাহাতে যে আতিশয্য প্রকাশ হইয়া পড়ে, তাহা কতকটা কৃত্রিম, অতএব তাহার দ্বারা জাতিগত অত্যুক্তির প্রকৃতি ঠিক ধরা যায় না। ঠিক খাঁটি বিলাতি অত্যুক্তির একটা দৃষ্টান্ত মনে পড়িতেছে। গবর্মেণ্ট সেই দৃষ্টান্তটি আমাদের চোখের সাম্‌নে পাথরের স্তম্ভ দিয়া স্থায়িভাবে খাড়া করিয়া তুলিয়াছেন, তাই সেটা হঠাৎ মনে পড়িল। তাই অন্ধকূপহত্যার অত্যুক্তি।

 পূর্ব্বেই বলিয়াছি, প্রাচ্য অত্যুক্তি মানসিক ঢিলামি। আমরা কিছু প্রাচুর্য্যপ্রিয়, আঁটাআঁটি আমাদের সহে না। দেখ না আমাদের কাপড়গুলা ঢিলাঢালা, আবশ্যকের চেয়ে অনেক বেশি—ইংরেজের বেশভূষা কাটাছাঁটা, ঠিক মাপসই—এমন কি, আমাদের মতে তাহা আঁটিতে আঁটিতে ও কাটিতে কাটিতে শালীনতার সীমা ছাড়াইয়া গেছে। আমরা, হয় প্রচুররূপে নগ্ন, নয় প্রচুররূপে আবৃত। আমাদের কথাবার্তাও সেই ধরণের,—হয় একেবারে মৌনের কাছাকাছি, নয় উদারভাবে সুবিস্তৃত। আমাদের ব্যবহারও তাই, হয় অতিশয় সংযত, নয় হৃদয়াবেগে উচ্ছসিত।

 কিন্তু ইংরেজের অত্যুক্তির সেই স্বাভাবিক প্রাচুর্য্য নাই,—তাহা অত্যুক্তি হইলেও খর্ব্বকায়। তাহা আপনার অমূলকতাকে নিপুণভাবে মাটিচাপা দিয়া ঠিক সমূলকতার মত সাজাইয়া তুলিতে পারে। প্রাচ্য অত্যুক্তির অতিটুকুই শোভা, তাহাই তাহার অলঙ্কার, সুতরাং তাহা অসঙ্কোচে বাহিরে আপনাকে ঘোষণা করে। ইংরেজি অত্যুক্তির অতিটুকুই গভীর ভাবে ভিতরে থাকিয়া যায়—বাহিরে তাহা বাস্তবের সংযত সাজ পরিয়া খাঁটি সত্যের সহিত এক পংক্তিতে বসিয়া পড়ে।

 আমরা হইলে বলিতাম, অন্ধকূপের মধ্যে হাজারো লোক মরিয়াছে। সংবাদটাকে একেবারে একঠেলায় অত্যুক্তির মাঝ-দরিয়ার মধ্যে রওনা করিয়া দিতাম। হল্ওয়েল্ সাহেব একেবারে জনসংখ্যা