পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ধম্মপদং
১৪১

হওয়া সেখানে সকলেরই উদ্দেশ্য। য়ুরোপের ইতিহাস কর্মেরই ইতিহাস।

 য়ুরোপ কর্মকে বড়ো করিয়া দেখিয়াছে বলিয়া কর্ম করা সম্বন্ধে স্বাধীনতা চাহিয়াছে। আমরা যাহা ইচ্ছা তাহা করিব; সেই স্বাধীন ইচ্ছা যেখানে অন্যের কর্ম করিবার স্বাধীনতাকে হনন করে কেবল সেইখানেই আইনের প্রয়োজন। এই আইনের শাসন ব্যতিরেকে সমাজের প্রত্যেকের যথাসম্ভব স্বাধীনতা থাকিতেই পারে না। এইজন্য য়ুরোপীয় সমাজে সমস্ত শাসন ও শাসনের অভাব প্রত্যেক মানুষের ইচ্ছাকে স্বাধীন করিবার জন্যই কল্পিত।

 ভারতবর্ষও স্বাধীনতা চাহিয়াছে, কিন্তু সে স্বাধীনতা একেবারে কর্ম হইতে স্বাধীনতা। আমরা জানি, আমরা যাহাকে সংসার বলি সেখানে কর্মই বস্তুত কর্তা, মানুষ তাহার বাহনমাত্র। জন্ম হইতে মৃত্যু পর্যন্ত আমরা এক বাসনার পরে আর এক বাসনাকে, এক কর্ম হইতে আর-এক কর্মকে বহন করিয়া চলি, হাঁপ ছাড়িবার সময় পাই না–তাহার পরে সেই কর্মের ভার অন্যের ঘাড়ে চাপাইয়া দিয়া হঠাৎ মৃত্যুর মধ্যে সরিয়া পড়ি। এই-যে বাসনার তাড়নায় চিরজীবন অন্তবিহীন কর্ম করিয়া যাওয়া, ইহারই অবিরাম দাসত্ব ভারতবর্ষ উচ্ছেদ করিতে চাহিয়াছে।

 এই লক্ষ্যের পার্থক্য থাকাতেই য়ুরোপ বাসনাকে যথাসম্ভব স্বাধীনতা দিয়াছে এবং আমরা বাসনাকে যথাসম্ভব খর্ব করিয়াছি। বাসনা যে কোনোদিনই শান্তিতে লইয়া যায় না, পরিণামহীন কর্মচেষ্টাকে জাগ্রত করিয়া রাখে, ইহাকেই আমরা বাসনার দৌরাত্ম্য বলিয়া অসহিষ্ণু হইয়া উঠি। য়ুরোপ বলে, বাসনা যে কোনো পরিণামে লইয়া যায় না, তাহা নিয়তই যে আমাদের প্রয়াসকে উক্তি করিয়া রাখে, ইহাই তাহার গৌরব। য়ুরোপ বলে,প্রাপ্তি নহে–সন্ধানই আনন্দ। ভারত-