পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
ভারতবর্ষের ইতিহাস।
২৭

ভাবটি অনুভব করিব, তখন আমাদের বর্ত্তমানের সহিত অতীতের বিচ্ছেদ লোপ পাইবে।

 বিদেশের শিক্ষা ভারতবর্ষকে অতীতে ও বর্ত্তমানে দ্বিধা বিভক্ত করিতেছে। যিনি সেতু নির্ম্মাণ করিবেন, তিনি আমাদিগকে রক্ষা করিবেন। যদি সেই সেতু নির্ম্মিত হয়, তবে এই দ্বিধারও সফলতা আছে—কারণ বিচ্ছেদের আঘাত না পাইলে মিলন সচেতন হয় না। যদি আমাদের মধ্যে কিছুমাত্র পদার্থ থাকে, তবে বিদেশ আমাদিগকে যে আঘাত করিতেছে, সেই আঘাতে স্বদেশকেই আমরা নিবিড়তররূপে উপলব্ধি করিব। প্রবাসে নির্ব্বাসনই আমাদের কাছে গৃহের মাহাত্ম্যকে মহত্তম করিয়া তুলিবে।


 মামুদ ও মহম্মদ্ঘোরীর বিজয়বার্ত্তার সমস্ত তারিখ আমরা মুখস্থ করিয়া পরীক্ষার প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হইয়াছি, এখন যিনি সমস্ত ভারতবর্ষকে আমাদের সম্মুখে মূর্ত্তিমান্‌ করিয়া তুলিবেন, অন্ধকারের মধ্যে দাড়াইয়া সেই ঐতিহাসিককে আমরা আহবান করিতেছি। তিনি তাহার শ্রদ্ধার দ্বারা আমাদের মধ্যে শ্রদ্ধার সঞ্চার করিবেন, আমাদিগকে প্রতিষ্ঠাদান করিবেন, আমাদের আত্ম-উপহাস আত্মঅবিশ্বাসকে অতি অনায়াসে তিরস্কৃত করিবেন, আমাদিগকে এমন প্রাচীন সম্পদের অধিকারী করিবেন যে, পরের ছদ্মবেশে নিজের লজ্জা লুকাইবার আর প্রবৃত্তি থাকিবে না। তখন এ কথা আমরা বুঝিব, পৃথিবীতে ভারতবর্ষের একটি মহৎ স্থান আছে, আমাদের মধ্যে মহৎ আশার কারণ আছে; আমরা কেবল গ্রহণ করিব না— অনুকরণ করিব না, দান করিব—প্রবর্ত্তন করিব, এমন সম্ভাবনা আছে; পলিটিক্স এবং বাণিজ্যই আমাদের চরমতম গতিমুক্তি নহে, প্রাচীন ব্রহ্মচর্য্যের পথে বৈরাগ্য-কঠিন দারিদ্র্যগৌরব শিরোধার্য্য করিয়া দুর্গম-নির্ম্মল মাহাত্ম্যের উন্নততম শিখরে অধিরোহণ করিবার