পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৩৪
ভারতবর্ষ।

যায় না। যে রাজা সিংহাসনে বসেন, তিনি দোকান খুলিয়া ব্যবসা চালাইতে পারেন না। সম্মান যাহার প্রাপ্য, তাহাকেই সকল দিকে সর্ব্বদা নিজের ইচ্ছাকে খর্ব্ব করিয়া চলিতে হয়। গৃহের অন্যান্য লোকের অপেক্ষ। আমাদের দেশে গৃহকর্ত্তা ও গৃহকর্ত্রীকেই সাংসারিক বিষয়ে অধিক বঞ্চিত হইতে হয়– বাড়ীর গৃহিণীই সকলের শেষে অন্ন পান। ইহা না হইলে আত্মম্ভরিতার উপর কর্তৃত্বকে দীর্ঘকাল রক্ষা করা যায় না। সম্মানও পাইবে, অথচ তাহার কোন মূল্য দিবে না, ইহা কখনই চিরদিন সহ্য হয় না।

 আমাদের আধুনিক ব্রাহ্মণেরা বিনামূল্যে সম্মান-আদায়ের বৃত্তি অবলম্বন করিয়াছিলেন। তাহাতে তাঁহাদের সম্মান আমাদের সমাজে উত্তরোত্তর মৌখিক হইয়া আসিয়াছে। কেবল তাহাই নয়, ব্রাহ্মণেরা সমাজের যে উচ্চকর্ম্মে নিযুক্ত ছিলেন, সে কর্ম্মে শৈথিল্য ঘটাতে সমাজেরও সন্ধিবন্ধন প্রতিদিন বিশ্লিষ্ট হইয়া আসিতেছে!

 যদি প্রাচ্যভাবেই আমাদের দেশে সমাজরক্ষা করিতে হয়, যদি যুরোপীয় প্রণালীতে এই বহুদিনের বৃহৎ সমাজকে আমূল পরিবর্তন করা সম্ভবপর বা বাঞ্ছনীয় না হয়, তবে যথার্থ ব্রাহ্মণসম্প্রদায়ের একান্ত প্রয়োজন আছে। তাহারা দরিদ্র হইবেন, পণ্ডিত হইবেন, ধর্মনিষ্ঠ হইবেন, সর্ব্বপ্রকার আশ্রমধর্ম্মের আদর্শ ও আশ্রয়স্বরপ হইবেন ও গুরু হইবেন।

 যে সমাজের একদাল ধনমানকে অবহেলা করিতে জানেন, বিলাসকে ঘৃণা করেন, যাহাদের আচার নির্ম্মল, ধর্ম্মনিষ্ঠা দৃঢ়, যাঁহার নিঃশ্বার্থভাবে জ্ঞান বিতরন রত– পরাধীনতা বা দারিদ্র্যে সে সমাজের কোন অবমাননা নাই। সমাজ যাঁঁহাকে যথার্থভাবে সম্মাননীয় করিয়া তোলে সমাজ তাঁহার দ্বারাই সম্মানিত হয়।