পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
ভারতবর্ষ।
৪৪

রাখিতে বাধ্য হইয়াছিল। ক্ষত্রিয়বৈশ্যদিগকে সেরূপ বিশেষভাৰে তাহাদের পূর্বতন আচারকাঠিন্যের মধ্যে বদ্ধ করিবার কোন অত্যাবশ্যকতা বাংলাসমাজে ছিল না। যে খুসি যুদ্ধ করুক্‌, বাণিজ্য করুক্‌, তাহাতে সমাজের বিশেষ কিছু আসিত-যাইত না—এবং যাহারা যুদ্ধবাণিজ্য-কৃষি-শিল্পে নিযুক্ত থাকিবে, তাহাদিগকে বিশেষ চিহ্লের দ্বারা পৃথক্ করিবার কিছুমাত্র প্রয়োজন ছিল না। ব্যবসায় লোকে নিজের গরজেই করে, কোন বিশেষ ব্যবস্থার অপেক্ষ রাখে না—ধর্ম্মসম্বন্ধে সে বিধি নহে; তাহা প্রাচীন নিয়মে আবদ্ধ, তাহার আয়োজন, রীতিপদ্ধতি আমাদের স্বেচ্ছাবিহিত নহে।

  অতএব জড়ত্বপ্রাপ্ত সমাজের শৈথিল্যবশতই একসময়ে ক্ষত্রিয়-বৈশ্য আপন অধিকার হইতে ভ্রষ্ট হইয়া একাকার হইয়া গেছে। তাঁহারা যদি সচেতন হন, যদি তাঁহারা নিজের অধিকার যথার্থভাবে গ্রহণ করিবার জন্য অগ্রসর হন, নিজের গৌরব যথার্থভাবে প্রমাণ করিবার জন্য উদ্ধত হন, তবে তাহাতে সমস্ত সমাজের পক্ষে মঙ্গল, ব্রাহ্মণদের পক্ষে মঙ্গল।

  ব্রাহ্মণদিগকে নিজের যথার্থ গৌরব লাভ করিবার জন্য যেমন প্রাচীন আদর্শের দিকে যাইতে হইবে, সমস্ত সমাজকেও তেমনি যাইতে হইবে; ব্রাহ্মণ কেবল একলা যাইবে এবং আর সকলে যে যেখানে আছে, সে সেইখানেই পড়িয়া থাকিবে, ইহা হইতেই পারে না। সমস্ত সমাজের এক দিকে গতি না হইলে তাহার কোন এক অংশ সিদ্ধিলাভ করিতেই পারে না। যখন দেখিব, আমাদের দেশের কায়স্থ ও বণিক্‌গণ আপনাদিগকে প্রাচীন ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য সমাজের সহিত যুক্ত করিয়া বৃহৎ হইবার, বহু পুরাতনের সহিত এক হইবার চেষ্টা করিতেছেন এবং প্রাচীন ভারতের সহিত আধুনিক ভারতকে সম্মিলিত করিয়া আমাদের জাতীয় সত্তাকে অবিচ্ছিন্ন করিবার চেষ্টা করিতেছেন,