পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
ব্রাহ্মণ।
৪৭

দিয়াই যাইতে হয়—কিন্তু এমনভাবে যাইতে হয়, যেন ইহাই চরম না হইয়া উঠে। কর্ম্মকেই একান্ত প্রাধান্য দিলে সংসারই চরম হইয়া উঠে; মৃত্যুকে উত্তীর্ণ হওয়া যায় না, অমৃত লাভ করিবার লক্ষ্যই ভ্রষ্ট হয়, তাহার অবকাশই থাকে না। এইজন্যই কর্ম্মকে সীমাবদ্ধ করা, কর্ম্মকে ধর্ম্মের সহিত যুক্ত করা, কর্ম্মকে প্রবৃত্তির হাতে, উত্তেজনার হাতে, কর্ম্মজনিত বিপুল বেগের হাতে ছাড়িয়া না দেওয়া; এবং এইজন্যই ভারতবর্ষে কর্ম্মভেদ বিশেষ বিশেষ জনশ্রেণীতে নির্দ্দিষ্ট করা।

 ইহাই আদর্শ। ধর্ম্ম ও কর্মের সামঞ্জস্য রক্ষা করা এবং মানুষের চিত্ত হইতে কর্ম্মের নানাপাশ শিথিল করিয়া তাহাকে একদিকে সংসারব্রতপরায়ণ, অন্যদিকে মুক্তির অধিকারী করিবার অন্য কোন উপায় ত দেখি না। এই আদর্শ উন্নততম আদর্শ এবং ভারতবর্ষের আদর্শ। এই আদর্শে বর্ত্তমান সমাজকে সাধারণভাবে অধিকৃত ও চালিত করিবার উপায় কি, তাহা আমাদিগকে চিন্তা করিতে হইবে। সমাজের সমস্ত বন্ধন ছেদন করিয়া কর্ম্মকে ও প্রবৃত্তিকে উদ্দাম করিয়া তোলা—সেজন্য কাহাকেও চেষ্টা করিতে হয় না। সমাজের সে অবস্থা জড়ত্বের দ্বারা, শৈথিল্যের দ্বারা আপনি আসিতেছে।

 বিদেশী শিক্ষার প্রাবল্যে, দেশের অর্থ নৈতিক অবস্থার প্রতিকূলতায় এই ভারতবর্ষীয় আদর্শ সত্বর এবং সহজে সমস্ত সমাজকে অধিকার করিতে পারিবে না, ইহা আমি জানি। কিন্তু য়ুরোপীয় আদর্শ অবলম্বন করাই যে আমাদের পক্ষে সহজ, এ দুরাশাও আমার নাই। সর্ব্বপ্রকার আদর্শ পরিত্যাগ করাই সর্ব্বাপেক্ষা সহজ–এবং সেই সহজ পথই আমরা অবলম্বন করিয়াছি। য়ুরোপীয় সভ্যতার আদর্শ এমন একটা আল্‌গা জিনিষ নহে যে, তাহা পাকা ফলটির মত পাড়িয়া লইলেই কবলের মধ্যে অনায়াসে স্থান পাইতে পারে।