পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৫০
ভারতবর্ষ।

নবীন হইয়া, প্রফুল্ল হইয়া, ব্যাপ্ত হইয়া উঠিয়াছে, তখন তাহা শ্মশান-শয্যার নীরস ইন্ধন নহে, জীবননিকুঞ্জের ফলবান্ বৃক্ষ হইয়া উঠিয়াছে।

 অকস্মাৎ উদ্বেলিত সমুদ্রের বন্যার ন্যায় যখন আমাদের সমাজের মধ্যে ভাবের আনন্দ প্রবাহিত হইবে, তখন আমাদের দেশে এই সকল প্রাচীন নদীপথগুলিই কূলে-কূলে পরিপূর্ণ হইয়া উঠিবে। তখন স্বভাবতই আমাদের দেশে ব্রহ্মচর্য্যে জাগিয়া উঠিবে, সামসঙ্গীতধ্বনিতে জাগিয়া উঠিবে, ব্রাহ্মণে ক্ষত্রিয়ে বৈশ্যে জাগিয়া উঠিবে। যে পাখীরা প্রভাতকালে তপোবনে গান গাহিত, তাহারাই গাহিয়া উঠিবে, দাঁড়ের কাকাতুয়া বা খাঁচার কেনারি-নাইটিঙ্গেল্ নহে।

 আমাদের সমস্ত সমাজ সেই প্রাচীন দ্বিজত্বকে লাভ করিবার জন্য চঞ্চল হইয়া উঠিতেছে, প্রত্যহ তাহার পরিচয় পাইয়া মনে আশার সঞ্চার হইতেছে। একসময় আমাদের হিন্দুত্ব গোপন করিবার, বর্জ্জন করিবার জন্য আমাদের চেষ্টা হইয়াছিল–সেই আশায় আমরা অনেকদিন চাঁদনীর দোকানে ফিরিয়াছি ও চৌরঙ্গী-অঞ্চলের দেউড়িতে হাজ্‌রি দিয়াছি। আজ যদি আপনাদিগকে ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়-বৈশ্য বলিয়া প্রতিপন্ন করিবার উচ্চাকাঙ্ক্ষা আমাদের মনে জাগিয়া থাকে, যদি আমাদের সমাজকে পৈতৃক গৌরবে গৌরবান্বিত করিয়াই মহত্বলাভ করিতে ইচ্ছা করিয়া থাকি, তবে ত আমাদের আনন্দের দিন। আমরা ফিরিঙ্গি হইতে চাই না, আমরা দ্বিজ হইতে চাই। ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে ইহাতে যাঁহারা বাধা দিয়া অনর্থক কলহ করিতে বসেন, তর্কের খুলায় ইহার সুদূরব্যাপী সফলতা যাঁহারা না দেখিতে পান, বৃহৎ ভাবের মহত্বের কাছে আপনাদের ক্ষুদ্র পাণ্ডিত্যের ব্যর্থ বাদ-বিবাদ যাঁহারা লজ্জার সহিত নিরস্ত না করেন, তাঁহারা যে সমাজের আশ্রয়ে মানুষ হইয়াছেন, সেই সমাজেরই শত্রু। দীর্ঘকাল হইতে ভারতবর্ষ আপন ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়-বৈশ্য সমাজকে আহ্বান করিতেছে। য়ুরোপ তাহার