পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৬৪
ভারতবর্ষ

বঞ্চিত হইয়া সহরে এবং কারখানার মধ্যে ঠাসাঠাসি করিয়া থাকে।

 আমাদের কবিগণ—লেখকগণ ধনের মধ্যে, ক্ষমতার মধ্যে, নানাপ্রকার উদ্যোগের মধ্যে, কল্যাণ অনুসন্ধান করিতে উপদেশ দেন নাই, কিন্তু মানবজীবনের অত্যন্ত সরল ও বিশ্বব্যাপী সম্বন্ধগুলির সংযত, সুনির্ব্বাচিত, স্বমার্জিত রসাস্বাদনের পথে আমাদের মনকে তাহার প্রবর্ত্তিত করিয়াছেন। এই জিনিষটা আমাদের আছে—এটা তোমরা আমাদিগকে দিতে পার না, কিন্তু এটা তোমরা অনায়াসে অপহরণ। করিতে পার। তোমাদের কলের গর্জনের মধ্যে ইহার স্বর শোনা যায়। না, তোমাদের কারখানার কালে ধোয়ার মধ্যে ইহাকে দেখিতে পাওয়া যায় না,—তোমাদের বিলাতি জীবনযাত্রার ঘূর্ণ এবং ঘর্ষণের মধ্যে ইহ। মরিয়া যায়। যে কেজো লোকদিগকে তোমরা অত্যন্ত খাতির করিয়া থাক, যখন দেখি তাহারা ঘণ্টার পর ঘণ্টায়, দিনের পর দিনে, বৎসরের পর বৎসরে তাছাদের জাঁতার মধ্যে আনন্দহীন অগত্য-প্রেরিত খাটুনিতে নিযুক্ত, যখন দেখি তাহাদের দিনের উৎকণ্ঠাকে তাহার স্বল্পাবশিষ্ট অবকাশের মধ্যে টানিয়া আনিতেছে, এবং পরিশ্রমের দ্বারা তত্তটা নহে, যতটা শুষ্ক সঙ্কীর্ণ দুশ্চিন্তা দ্বারা জাপনাকে জীর্ণ করিয়া ফেলিতেছে, তখন—এ কথা স্বীকার করিতেই হইবে যে, আমাদের দেশের প্রাচীন বৈপ্তবৃত্তির সরলতর পদ্ধতির কথা স্মরণ করিয়া আমি সন্তোষ-লাভ করি—এবং আমাদের যে সকল চিরব্যবহৃত পথগুলি আমাদের অভ্যস্ত চরণের কাছে এমন পরিচিত যে, তারা দিয়া চলিবার সময়ও অনন্ত নাক্ষত্রমগুলির দিকে দৃষ্টিপাত করিবার জন্য আমাদের অবকাশের আভাৱ ঘটে না—তোমাদের সমুদয় নূতন ও ভয়সঙ্কুল বর্ম্মের চেয়ে সেই পথগুলিকে আমি অধিক মূল্যবান বলিয়া গৌরব করি।

 ইহার পরে লেখক রাষ্ট্রতন্ত্রের কথা ভুলিয়াছেন। তিনি বলেন,