পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
চীনেম্যানের চিঠি।
৬৫

গর্মেণ্ট, তোমাদের কাছে এতই প্রধান এবং সর্বত্রই সে তোমাদের সঙ্গে এমনি লাগিয়াই আছে যে, যে জাতি গবর্মেণ্টকে প্রায় সম্পূর্ণই বাদ দিয়া চলিতে পারে, তাহার অবস্থা তোমরা কল্পনাই করিতে পার না। অথচ আমাদেরই সেই অবস্থা। আমাদের সভ্যতার সরল এবং অকৃত্রিম ভাব, আমাদের লোকদের শান্তিপ্রিয় প্রকৃতি, এবং সর্বোচ্চ আমাদের সেই পরিবারতন্ত্র, যাহা পোলিটিক্যাল, সামাজিক ও আর্থিক ব্যাপারে এক একটি ক্ষুদ্র রাজ্যবিশেষ, তাহারা আমাদিগকে গার্মেণ্ট শাসন হইতে এতটা-দুর মুক্তিদান করিয়াছে যে, য়ুরোপের পক্ষে তাহা বিশ্বাস করাই কঠিন।

 আমাদের সমাজের গোড়াকার জিনিষগুলি কোন রাজক্ষমতার স্বেচ্ছাকৃত সৃজন নহে। আমাদের জনসাধারণ নিজের জীবনকে এইরূপ শরীরতন্ত্রের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছে। কোন গবর্মেণ্ট, তাহাকে গড়ে নাই, কোন গর্মেণ্ট, তাহার বদল করিতে পারে না। এক কথায়, আইন-জিনিষটা উপর হইতে আমাদের মাথায় চাপান হয় নাই, তাহা আমাদের জাতিগত জীবনের মূলসূত্র, এবং যাহা শাস্ত্রে লিপিবদ্ধ আছে, তাহাই ব্যবহারে প্রবর্তিত হইয়াছে। এইজন্য চীনে গবর্মেণ্ট, যথেচ্ছা চারী নহে, অত্যাবশ্যকও নয়। রাজপুরুষদের শাসন তুলিয়া লও, তা আমাদের জীবনযাত্রা প্রায় পূর্বের মতই চলিয়া যাইবে। যে আইন আমরা মান্য করি, সে আমাদের স্বভাবের আইন, বহুশতাব্দীর অভিজ্ঞ ভায় তাহা অভিব্যক্ত হইয়া উঠিয়াছে,—বাহিরের শাসন ভুলিয়া লইলেও ইহার কাছে আমরা বশ্যতা স্বীকার করি। যাই ঘটুক না, আমাদের পরিবার থাকে, পরিবারের সঙ্গে সঙ্গে মনের সেই গঠনটি থাকে, সেই শৃঙ্খলা, নিষ্ঠতা ও মিতব্যন্বিতার ভাটি থাকিয়া যায়। ইহারাই চীনকে তৈরি করিয়াছে।

 তোমাদের পশ্চিমদেশে গবর্মেণ্ট ব্যাপারটা সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। এখানে