পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৬৬
ভারতবর্ষ।

কোন মূলবিধান নাই, কিন্তু ইচ্ছাকৃত অন্তহীন আইন পড়িয়া আছে। মাটি হইতে কিছুই গজাইয়া উঠে না, উপর হইতে সমস্ত পুতিয়া দিতে হয়। যাহাকে একবার পোঁতা হয়, তাহাকে আবার পোঁতা দরকার হয়। গত শত বৎসরের মধ্যে তোমরা তোমাদের সমস্ত সমাজকে উলটাইয়া দিয়াছ। সম্পত্তি, বিবাহ, ধর্ম্ম, চরিত্র, শ্রেণীবিভাগ পদবিভাগ, অর্থাৎ মানবসম্বন্ধগুলির মধ্যে যাহা কিছু সব চেয়ে উদার ও গভীর, তাহাদিগকে একেবারে শিকড়ে ধরিয়া উপড়াইয়া কালের স্রোতে আবর্জনার মত ভাসাইয়া দেওয়া হইয়াছে। এইজন্যই তোমাদের গর্মেণ্টকে এত বেশি উদ্যম প্রয়োগ করিতে হয়—কারণ, গবর্মেণ্ট, নহিলে কে তোমাদের সমাজকে ধারণ করিয়া রাখিবে? তোমাদের পক্ষে গবর্মেণ্ট, যত একান্ত আবশ্যক, সৌভাগ্যক্রমে আমাদের পূর্বদেশের পক্ষে তত নয়। আমার কাছে এটা একটা অমঙ্গল বলিয়াই বোধ হয়—কিন্তু দেখিতেছি, ইহা নহিলেও তোমাদের চলিবার উপায় নাই। তবু, এত বড় কাজটা যাহাকে দিয়া আদায় করিতে চাও, সেই যন্ত্রটার অসামান্য অপটুতা দেখিয়া আমি আরো আশ্চর্য্য হই। যোগ্য-লোক নির্বাচনের সুনিশ্চিত উপায় আবিষ্কার বা উদ্ভাবন করা দুরূহ, সে কথা স্বীকার করি, কিন্তু তবু এটা বড়ই অদ্ভূত যে, যাহাদের উপরে এমন একটা মহৎ-ভার দেওয়া হয়, তাহাদের নৈতিক ও বুদ্ধিগত সামর্থ্যের কোনপ্রকার পরীক্ষার চেষ্টা হয় না।

 ইলেক্শন্-ব্যাপারটার অর্থ কি? তোমরা মুখে বল, তাহার অর্থ জনসাধারণের দ্বারা প্রতিনিধি নির্বাচন—কিন্তু ভোলা মনে মনে কি নিশ্চয় জান না, তাহার অর্থ তাহা নহে? বস্তুত এক একটি দলীয় স্বার্থেরই প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়। জমিদার, মদের কারখানার বর্জ্য, রেল কোম্পানির অধ্যক্ষ-ইহারাই কি তোমাদিগকে শাসন করিতেছে না? আমি জানি, এক দল আছে, তাহারা ‘মাস’ অর্থাৎ জনসাধারণের