পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৬৮
ভারতবর্ষ।

ব্যর্থ করিতে পারে, কিন্তু সুখে-গন্তোষে মানুষকে ক্ষুদ্র করে। চীন বলিতেছে, আমি বাহিরের কিছুতেই দৃকপাত করি নাই নিজের এলাকার মধ্যেই নিজের সমস্ত চেষ্টাকে ৰদ্ধ করিয়া সুখী হইয়াছি, কিন্তু এ কথা যথেষ্ট নহে। এই সংস্কীর্ণতাটুকুর মধ্যে সরল উৎকর্ষ লাভ করাকেই চরম মনে করিলে হতাশ হইতে হয়। জলধারা যদি সমুদ্রকে চায়, তবে নিজেকে দুই তটের মধ্যে সংহত-সংযত করিয়া তাকে চলিতে হয়, কিন্তু তাই বলিয়া নিজেকে একজায়গায় আনিয়া বদ্ধ করিলে চলে না। মুক্তির জন্যই তাহাকে সংযত হইতে হয়, কিন্তু নিজেকে বন্দী করিলে তাহার চরম উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়—তাহা হইলে নদীকে ঝিল হইতে হয় এবং স্রোতের অন্তহীন ধারাকে সমুদ্রের অন্তহীন তৃপ্তির মধ্যে লইয়া যাওয়া হয় না।

 ভারতবর্ষ সমাজকে সংযত সরল করিয়া তুলিয়াছিল, তাহা সমাজের মধ্যেই আবদ্ধ হইবার জন্য নহে। নিজেকে শতধাবিভক্ত অন্ধ চেষ্টার মধ্যে বিক্ষিপ্ত না করিয়া, সে আপন সংহত শক্তিকে অনন্তের অভিমুখে একাগ্র করিবার জন্যই ইচ্ছাপূর্বক বাহ্যবিষয়ে সংকীর্ণতা আশ্রয় করিয়াছিল। নদীর তটবন্ধনের ন্যায় সমাজবন্ধন তাহাকে বেগদান করিবে, বন্দী করিবে না, এই তাহার উদ্দেশ্য ছিল। এইজন্য ভারতবর্ষের সমস্ত ক্রিয়াকর্মের মধ্যে, সুখশান্তিসন্তোষের মধ্যে মুক্তির আহ্বান আছে–আত্মাকে ভূমানন্দে ব্রহ্মের মধ্যে বিকশিত করিয়া তুলিবার জন্যই সে সমাজের মধ্যে আপন শিকড় বাঁধিয়াছিল। যদি সেই লক্ষ্য হইতে ভ্রষ্ট হই, জড়ত্ববশত সেই পরিণামকে উপেক্ষা করি, তবে বন্ধন কেবল বন্ধনই থাকিয়া যায়, তবে অতিক্ষুদ্র সন্তোষশান্তির কোনো অর্থই থাকে না। ভারতবর্ষের লক্ষ্য ক্ষুদ্র নহে, তাহা ভারতবর্ষ স্বীকার করিয়াছে–ভূমৈব সুখং নাল্পে সুখমস্তি—ভূমাই সুখ, অল্পে সুখ নাই। ভারতের ব্রহ্মবাদিনী বলিয়াছেন: যেনাহং নামৃতা স্যাং কিমহং তেন