পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
বারােয়ারি-মঙ্গল।
৯৩

নাই। ব্যয়কাতর কৃপণের ধনের মত, ছোট-বড়-মাঝারি, ক্ষণিক এবং চিরন্তন, সকলপ্রকার মাহাত্ম্যকেই শাদা পাথর দিয়া চাপা দিয়া রাখিবার প্রবৃত্তি যদি আমাদের না হয়, তবে তাহা লইয়া লজ্জা না করিলেও চলে। ভক্তিকে যদি প্রতিদিনের ব্যবহারযোগ্য করিতে হয়, তবে তাহা হইতে প্রতিদিনের অভ্যাগত অনাবশ্যক ভারগুলি বিদায় করিবার উপায় রাখিতে হয়, তাহার বিপরীত প্রণালীতে সমস্তই স্তূপাকার করিবার চেষ্টা না করাই ভাল।

 যাহা বিনষ্ট হইবার, তাহাকে বিনষ্ট হইতে দিতে হইবে, যাহা অগ্নিতে দগ্ধ হইবার, তাহা ভস্ম হইয়া যাক্‌! মৃতদেহ যদি লুপ্ত হইয়া না যাইত, তবে পৃথিবীতে জীবিতের অবকাশ থাকিত না, ধরাতল একটি প্রকাণ্ড কবরস্থান হইয়া থাকিত। আমাদের হৃদয়ের ভক্তিকে পৃথিবীর ছোট এবং বড়, খাঁটি এবং ঝুঁটা, সমস্ত বড়ত্বের গোরস্থান করিয়া রাখিতে পারি না। যাহা চিরজীবী, তাহাই থাক্‌; যাহা মৃতদেহ, আজবাদে-কাল কীটের খাদ্য হইবে, তাহাকে মুগ্ধস্নেহে ধরিয়া রাখিবার চেষ্টা না করিয়া শোকের সহিত অথচ বৈরাগ্যের সহিত শ্মশানে ভস্ম করিয়া আসাই বিহিত। পাছে ভুলি, এই আশঙ্কায় নিজেকে উত্তেজিত রাখিবার জন্য কল বানাইবার চেয়ে ভোলাই ভাল। ঈশ্বর আমাদিগকে দয়া করিয়াই বিস্মরণশক্তি দিয়াছেন।

 সঞ্চয় নিতান্ত অধিক হইয়া উঠিতে থাকিলে, বাছাই-করা দুঃসাধ্য হয়। তাহা ছাড়া সঞ্চয়ের নেশা বড় দুর্জ্জয় নেশা—একবার যদি হাতে কিছু জমিয়া যায়, তবে জমাইবার ঝোঁক আর সামলানো যায় না। আমাদের দেশে ইহাকেই বলে—নিরানব্বইয়ের ধাক্কা। য়ুরোপ একবার বড়লোক জমাইতে আরম্ভ করিয়া এই নিরানব্বইয়ের আবর্তের মধ্যে পড়িয়া গেছে। য়ুরোপে দেখিতে পাই, কেহ বা ডাকের টিকিট জমায়