পাতা:ভারতীয় প্রাচীন চিত্রকলা.pdf/১০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯০
ভারতীয় প্রাচীন চিত্রকলা

চিন্ময় স্বরূপের মধ্যে সমগ্র বিশ্ব বিধৃত রহিয়াছে। তাহার উন্মেষ ও নিমেষে কোটী কোটী যুগের সৃষ্টি-প্রক্রিয়া ধ্বংস হইতেছে ও কোটী কোটী যুগের সৃষ্টি-প্রবাহ আবর্তিত হইতেছে। তরুলতা গুল্মের সহিত জীবজন্তুর সহিত সমগ্র নরনারী অন্তনিবিষ্ট হইয়া রহিয়াছে। যেখানে সৃষ্টি সেখানে ধ্বংস, যেখানে ধ্বংস সেইখানেই সৃষ্টি। এই জন্যই সৃষ্টি ও ধ্বংসের মধ্যে ব্যক্তিগত হর্ষশোকের কোনই অবসর নাই। সৃষ্টি ও ধ্বংসের মধ্যে সেই অপরূপেরই রূপময় লীলায় নটরাজের জটাভার উন্মুক্ত হইয়া নাচিয়া নাচিয়া এই চিরন্তন বিশ্বদোলার ইঙ্গিত করিতেছে। পলকে প্রলয় পলকে সৃষ্টির সূচনা করিতেছে। তাহার বাম পদে নটরাজ মৃত্যুর উপর নৃত্য করিতেছেন, একটি দক্ষিণ হস্তে লেলিহানজিহ্বা অগ্নিশিখা লইয়া ক্রীড়া করিতেছেন, আর একটা দক্ষিণ হস্তে বিশ্বকে অভয় দিতেছেন। তাঁহার মুখে হাসি, জন্ম-মৃত্যুর খেলায় আপন লীলারসকে উন্মুক্ত করিতেছেন। মৃত্যু ও অমৃত্যুর ঝরণা তাঁহার নৃত্যের মধ্য দিয়া যেন ঝরঝর ভাবে প্রবাহিত হইতেছে। নৃত্যের মধ্যে তাঁহার লীলায়িত দেহের ও লীলায়িত বাহু-চতুষ্টয়ের ও পদযুগলের সামঞ্জস্য কোথায়ও ব্যাহত হয় নাই। প্রতি অঙ্গের লাবণ্য সমগ্র নৃত্যের ধারার সহিত আপন আপন ক্ষুদ্রধারা মিলাইয়া সমগ্র নৃত্যের সামঞ্জস্যসুষমাকে উদ্ভাসিত করিতেছে। বিশ্বলীলার ছন্দে যে সমগ্র জগতের ছন্দ বাঁধা রহিয়াছে—যে গহ্বরে মৃত্যু সেই গহ্বরেই যে অমৃত্যু—যেখানে তমোলোক সেইখানেই যে জ্যোতির্লোক—