পাতা:ভারতীয় প্রাচীন চিত্রকলা.pdf/১৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভারতীয় প্রাচীন চিত্রকলা
১৫১

নহ্যেকস্মিন্নতিশয়বতাং সন্নিপাতো গুণানা—
মেকঃ সূতে কনকমুপলস্তৎপরীক্ষাক্ষমোহন্য।

(কাব্যমীমাংসা ১৪ পৃঃ)

আমাদের মতে ভাবয়িত্রী প্রতিভা না থাকিলে কারয়িত্রী প্রতিভা সম্ভব নহে। কিন্তু কারয়িত্রী প্রতিভা না থাকিলেও ভাবয়িত্রী প্রতিভা থাকিতে পারে। কারয়িত্রী প্রতিভায় যে জাতীয় সমাধি স্মৃতি পর্য্যবেক্ষণ ও অভ্যাস প্রয়োজন, ভাবয়িত্রী প্রতিভায় ততখানি তাহার প্রয়োজন নাই।

 এই প্রসঙ্গে আর একটী দার্শনিক বিচারের কথা আমাদের মনে উদয় হয়, চিত্রকে আমরা সত্য বলিব কি মিথ্যা বলিব, ভ্রম বলিব, কি সন্দেহ বলিব? চিত্রিত বস্তুর ও চিত্রেয় বস্তুর সমান অর্থক্রিয়াকারিত্ব নাই; জীবন্ত ব্যাঘ্র মনুষ্য খাইতে পারে কিন্তু ব্যাঘ্রের চিত্র তাহা পারে না। অথচ ইহার যে কোনও অর্থক্রিয়াকারিত্ব নাই তাহাও বলা চলে না। চিত্রিত ব্যাঘ্র দেখিয়াও রাত্রিকালে কেহ ভয় পাইতে পারে, তাহা ছাড়া চিত্র দেখিয়া আমাদের চিত্তে নানাবিধ সুখদুঃখাদিভাব উৎপন্ন হইতে পারে। কিন্তু শঙ্করাচার্য্য বলিয়াছেন যে রজ্জুতে মিথ্যা সর্প দেখিয়াও লোকে ভয়গ্রস্ত হইতে পারে। জীবন্ত ব্যাঘ্রকে স্পর্শেন্দ্রিয়দ্বারা ও অন্য বহুবিধ ইন্দ্রিয়দ্বারা উপলব্ধি করা যায় কিন্তু চিত্রকে কেবলমাত্র চক্ষু ইন্দ্রিয়দ্বারা গ্রহণ করা যায়। কিন্তু তাই বলিয়া চিত্রকে ভ্রম বলা যায় না। ভ্রমের নিয়ম এই যে বাধ হইলে ভ্রম আর থাকে না। চিত্রিত ব্যাঘ্রকে ব্যাঘ্র নয়