পাতা:ভারতীয় প্রাচীন চিত্রকলা.pdf/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২
ভারতীয় প্রাচীন চিত্রকলা

একটি ধ্যানগৃহীত জীবন্তভাবকে রূপ দিবেন—জীবনের পরিস্পন্দে জড় প্রস্তরকে স্পন্দময় করিবেন, ভাবের বিদ্রুতিতে মূর্ত্তিটিকে প্রাণময় করিবেন। শিল্পীর সমস্ত চেষ্টাই যেন এই দিকে প্রসারিত হইয়াছে যে তিনি কেমন করিয়া তাঁহার সাধনাদ্বারা প্রস্তরের জীবনকে প্রাণকে আত্মাকে তাঁহার ধ্যানবৃত আত্মা বা জীবনের সহিত অখণ্ড ঐক্যে পরিণত করিতে পারেন। তাঁহারা রেখাসন্নিবেশের দ্বারা মূর্ত্তির বাহ্য পরিচয় দিতেন, কিন্তু তাহার পর তাঁহাদের সমস্ত চেষ্টাই ছিল তাঁহাদের মূর্ত্তিকে প্রাণময় করিবার জন্য। বিষ্ণুধর্ম্মোত্তরে যে লিখিত আছে,

রেখাং প্রশংসন্ত্যাচার্য্যাঃ বর্ত্তনাঞ্চবিচক্ষণাঃ।
স্ত্রিয়ো ভূষণমিচ্ছন্তি বর্ণাঢ্যমিতরে জনাঃ॥

 —ইহার তাৎপর্য্য এই যে প্রাচীন আচার্য্যেরা রেখাসন্নিবেশদ্বারা বস্তুর স্বাভাবিক আকারকে ফুটাইয়া তোলা প্রশংসার চক্ষে দেখিতেন। কিন্তু পণ্ডিতেরা চাহিতেন তাহার প্রাণপ্রদ রূপ। কালিদাসের মত পর্য্যালোচন করিলে মনে হয় যে উভয়ের যেখানে সুসঙ্গত এবং সম্যক মিলন ঘটিত সেই চিত্রকেই তিনি শ্রেষ্ঠ মনে করিতেন। কিন্তু বাস্তবিক ভারতীয় শিল্পকলা দেখিলে দেখা যায় যে কতকগুলি শিল্পের মধ্যে বাস্তবের দিকে অর্থাৎ রেখাসন্নিবেশের দ্বারা যথাযথ মনুষ্যমূর্ত্তিকে গঠন করিয়া তোলার দিকে শিল্পীর প্রধান দৃষ্টি ছিল। গান্ধার শিল্পে এবং অতি প্রাচীন মহেঞ্জোদারো শিল্পে ইহার দৃষ্টান্ত দেখান যায়।