পাতা:ভারতী কার্তিক-চৈত্র ১৩২০.djvu/১৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬৭শ বর্ষ, অষ্টম সংখ্যা কি হাসিব বুঝিতে পারিলাম না। যে হরীশ বাবু তাহার বৈঠকখানা হইতে যদুকে কান ধরিয়া ও চড় মারিয়া তাড়াইয়া দিলেন তিনিই সেই যদুকে রাজদ্বারে সন্মানিত করিয়া দিবেন এরূপ আশা করা ও যে হিন্দুধৰ্ম্ম হীন জাতিদিগকে পতিত বলিয়া নির্দেশ করিয়াছেন সেই হিন্দুধৰ্ম্মই তাহাদের পারত্রিক মঙ্গলের বন্দোবস্ত করিয়া দিবেন এরূপ আশা করা একই রূপ বাতুলত। যদুর মহত্ব থাকিলে সে হরীশ বাবুকে ক্ষমা করিতে পারে কিন্তু মনে মনুষ্যত্বের লেশ মাত্র থাকিলেও সে হরীশ বাবুর অনুগ্রহের প্রার্থ হইতে পারে ন! | শূদ্র বেদধ্বনি শুনিলে তাহার কানে সীসা গলাইয়া ঢালিয়া দিতে হয় । শূদ্র ব্রাহ্মণের আসনে বসিলে তাহার গাত্রে উত্তপ্ত লৌহ দিয়া ক্ষত করিয়া দিতে হয়। হিন্দুধৰ্ম্মের প্রতিনিধি ব্রাহ্মণদের ইহাই শাসন। একজন শূদ্র তপস্তা করিতেছিল বলিয়া এক ব্রাহ্মণের কথায় রামের মত একজন রাজাও স্বহস্তে তাহার শিরশ্চেদন করিলেন। তথাপি আমরা অনেক সুশিক্ষিত শূদ্রকে হিন্দুধৰ্ম্মের পক্ষ হইয়া যুদ্ধে প্রবৃত্ত দেখিতে পাই। ইহা দেখিয় আমার মনে পড়ে যে উইলবর ফোসের সময়ে অনেক দাস দাসত্ব প্রথার উচ্ছেদেব বিরুদ্ধে ঘোরতর প্রতিবাদ করিয়াছিল । শাস্ত্রে বলে দাসের মুক্তি নাই। বাস্তবিক অমুক্ত জীবকেই দাস বলে। দাসত্ব দুই প্রকার, শারীরিক ও মানসিক । ইচ্ছানুসারে চলিতে ফিরিতে বা অন্ত কোন কাৰ্য্য করিতে না পারিলে শারীরিক দাসত্ব হয়। ইংরেজের রাজত্বে আমাদের শারীরিক দাসত্ব সম্পূর্ণরূপে অবনত জাতি brፃ» • দুরীভূত হইয়াছে । আমরা এখন যেমন স্বাধীন হইয়াছি পূৰ্ব্বে কখনও তেমন স্বাধীন ছিলাম না । দেশীয় রাজাদের রাজ্যের লোকও তেমন স্বাধীন নহে । মাড়বারীদিগের মুখে শুনিয়াছি যে রাজপুতানায় এখনও কোন প্রজাকে তাহার ইচ্ছাতুরূপ একটা বড় ও ভালবাড়ী নিৰ্ম্মাণ করিতে দেওয়া হয় না । দক্ষিণাপথের কোন কোন জাতিকে এখনও প্রকাশু রাজপথে চলিতে দেওয়া হয় না। পঞ্জাবের হীন জাতির ভাল পরিষ্কার কাপড় পরিয়া বাহির হইতে পায় না । এই সমস্তই প্রকৃত শারীরিক দাসত্ব । ইহা হইতে আমরা মুক্তি লাভ করিয়াছি। এথন যে দাসত্ব আছে তাহ মানসিক এবং সে দাসত্বেব জন্ত আমরা নিজেরাই দায়ী । এখন আমাদের মধ্যে যাহারা পুত্রবান তাহারা উত্তরাস্ত হইয়া আহারে বসিতে পারেন না । যাহাদের পিতা জীবিত আছেন তাহারা দক্ষিণদিকে মুখ কবিয়া থাইতে পারেন না, আমরা দিন বা ক্ষণ বিশেষে বাড়ীর বাহির হইতে পারি বা পারি না, কোন কোন জলাশয় আমাদের পার হইতে নাই, নবমী তিথিতে আমরা লাউ থাইতে পারি না, আমরা যে সৰ্ব্বশ্রেষ্ঠ জীব তাহা ভুলিয়া গিয়া আমরা টিকটিকির আদেশে চলা ফেরা করি। এইরূপ অশেষ প্রকারে আমরা স্বাধীনতা হইতে বঞ্চিত হইয়াছি। ইহার জন্ত আমরাই দোষী । সমাজও এখন এই সকল কার্য্যের জন্ত আমাদিগকে মারধর করে না। হিন্দুসমাজ চৈতন্যকে প্রহার করিয়াছিল, রামমোহনকে প্রহার করিতে চাহিয়াছিল এবং দয়ানন্দকে বিষ প্রয়োগ করিয়াছিল। কিন্তু এখন সে সব অত্যাচারও নাই। তবুও