পাতা:ভারতী কার্তিক-চৈত্র ১৩২০.djvu/১৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শান্তিনিকেতন ( গল্প ) "স্তের এই সুন্দর সন্ধ্যায় এই বিজন স্থানে, একাকী যোগাসনে বসিয়া কি করিতেছি, জিজ্ঞাসা করিতেছ? তুমি কি অন্ধ ? তোমার চক্ষু নাই ? দেখিতে পাইতেছ না যে দেবী পূজা করিতেছি ? নারীই সংসারের বিষ মহাজনেরা বলিয়া থাকেন, কিন্তু এক নারীই আমার জীবনের স্বধা ও পরিত্রাতা । তাহার পূজা করিয়া তাহার চিতা পুষ্পমাল্যে ভূষিত করিয়া এই ঘৃণিত জীবন ধন্ত করিতেছি। কি বলিতেছ? আমাকে দেখিয়া মুগ্ধ হইয়াছ ? তোমার হৃদয় মন এক মুহূর্তেই আমাকে সমর্পণ করিয়া ফেলিয়াছ ? তোমার হৃদয়ের পূজা, প্রাণের প্রেম, তোমার ধন রত্ন সকলই আমার চরণে ঢালিয়া দিতে প্রস্তুত আছ ? প্রাণের প্রেম ? হাঃ হাঃ পুরুষের প্রাণের প্রেম! প্রেম কাহাকে বলে তাহা তোমরা জান কি ? তোমরা জান শুধু শঠতা, প্রবঞ্চন, প্রতারণা । নারীর হৃদয় লইয়া ক্ষণিকের খেলা। মোহের বশে দুদিনের জন্ত তাহাকে পৃথিবীর সপ্তম স্বর্গে তুলিয়া ধরা, তারপর দুইদিন যাইতে না যাইতেই অবসাদ । তারপর পদাঘাতে তাহার হৃদয় চুর্ণ করিয়া দিয়া, পদলুষ্ঠিত ভগ্ন হৃদয় লইয়া গৰ্ব্বভরে বিজয় পতাকা উড়াইয়৷ আনন্দ করা, এই ত তোমাদের ভালবাসা । সই, অটল, গভীর অতলম্পর্শী প্রেম, সেই হৃদয় প্রশস্তকারী আপনাহার প্রেম, সেই আপনা ভুলিয়া সৰ্ব্বস্ব দান করা প্রেম, তাহা কাহাকে বলে জান কি ? যে প্রেম ভাল মন্দ জানে না, যে প্রেম পাপপুণ্য জানে না, যে প্রেম প্রেমাম্পদের বিচার জানে না, যে প্রেম শুধু জানে “আমি ভালবাসি” সে প্রেমের অর্থ জান কি ? ই ! আজ তুমি আমাকে সৰ্ব্বস্ব দান করিবার জন্ত প্রস্তুত, আজ আমাকে হৃদয়ের সৰ্ব্বোচ্চ শিখরে স্থান দিবার জন্ত তোমার প্রাণ উন্মুখ। কিন্তু কাল—কাল যদি আমি ভগ্ন হৃদয়ে তোমার দ্বারে ধুলায় লুটাইয়া কাদিয়া মরি তাহা হইলে তুমি ফিরিয়া চাহিবে কি ? না রণজয়ী বীরের মত, বিজয় পতাকা উড়াইয়া অন্ত হৃদয় জয় করিবার জন্ত মহাসমারোহে যাত্রা করিবে ? পুরুষের প্রণয় যে কি তাহা আমার শিরায় শিরায় লেখা আছে। এই বিংশতি বর্ষ বয়সে আমি যোগিনী কেন ? তাহ তোমারই মত একজনের জন্ত। সেও একদিন তাহার হৃদয়ের পূজা প্রাণের প্রেম আমার চরণে সমর্পণ করিয়াছিল। কেবল একটি জিনিষ সে দান করে নাই সেটি শ্রদ্ধা ৷ - আমার জীবনের কাহিনী শুনিতে চাহিতেছ ? - তবে শোন। বৃথা বাক্যে ব্যয়ে বেশী সময় নষ্ট করিবার সময় আমার নাই