পাতা:ভারতী কার্তিক-চৈত্র ১৩২০.djvu/১৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৭শ বর্ষ, অষ্টম সংখ্যা সুতরাং সংক্ষেপেই জীবন কাহিনী বলিব । কিন্তু একটু সরিয়া ঐ পাথরের উপর বোস-তোমার ছায়া দেবীর চিতা স্পর্শ করিতেছে । চাষার মেয়ে ছিলাম। চমকিয়া উঠিলে কেন ? চাষার মেয়ের এত রূপ সেই কথা ভাবিতেছ ? অার একজনও একদিন ঐ কথা ভাবিয়াছিল। শৈশবে মাতৃহীন হইয়। ছিলাম। পিতা অনেক বয়সে আমাকে পাইয়া বড়ই সুখী হইয়াছিলেন। তিনি পত্নীশোক ভুলিয়া আমাকে লালন পালন করিতে লাগিলেন । নিতান্ত শৈশবের কথা মনে নাই, কিন্তু জ্ঞানাবধি মনে আছে অত্যন্ত প্রত্যুষে উঠিয়া পিতা রন্ধন করিয়া আমাকে আহার করাইতেন। তারপর নিজে আহার করিয়া ক্ষেতে যাইতেন। আমিও সঙ্গে যাইতাম। সন্ধ্যাবেলা গৃহে ফিরিয়া পিতা পুনরায় রন্ধন করিতেন । আহারাদি হইলে পিতার ক্রেগড়ে মস্তক রাখিয় তাহার নিকট গল্প শুনিতে শুনিতে যে কখন ঘুমাইয়া পড়িতাম তাহা জানি নী । পিতার স্নেহে মাতার অভাব কখনও বোধ করি নাই। আমার ত্রয়োদশ বৎসর বয়সে পিতা বাতব্যাধিতে শয্যাশায়ী হইলেন । আমরা দরিদ্র হইলেও গৃহে ধান চাউল ও সামান্ত কিছু অর্থ সঞ্চিত ছিল। তাহ দ্বারা কোন ক্রমে সংসার চলিতে লাগিল । পিতার ব্যাধি অত্যন্ত বৃদ্ধি পাইলে চিকিৎসক ডাকিতে কৃতসংকল্প হইলাম । শুনিয়াছিলাম কলিকাতার একটি বাবু আমাদের গ্রামে বেড়াইতে আসিয়াছেন, তিনি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় সুদক্ষ । শান্তিনিকেতন brፃሳ ক্ষেতের একটি বালক দ্বারা তাহাকে সংবাদ দিলাম। কি কুক্ষণেই যে র্তাহাকে সংবাদ দিয়াছিলাম তাহ জানি না। তাহাতেই আমার সৰ্ব্বনাশের সুত্রপাত হইল । তিনি প্রত্যহই পিতাকে দেখিতে আসিতেন। গৃহে অন্ত কেহ না থাকাতে পিতার শয্যাপাশ্বে আমাকেই উপস্থিত থাকিতে হইত। আমি কখনও গ্রামের বাহিরে যাই নাই, গৃহের বাহিরেও বড় যাই নাই। অপরিচিত পুরুষ দেখা ও বাক্যালাপ করা আমার জীবনে এই প্রথম । ডাক্তার বাবুর সুন্দর চেহারা দেখিয়া আমি মুগ্ধ হইলাম। তিনিও প্রয়োজনে, আ প্রয়োজনে আমাকে ডাকিয়া সৰ্ব্বদাই বাক্যালাপ করিতেন। পিতার ব্যাধি ক্রমশঃই বৃদ্ধি পাইতে লাগিল । তিনিও বুঝিয়াছিলেন তাহার রক্ষা নাই। একদিন পথ্য হস্তে পিতার গৃহাভিমুখে যাইতেছি, দ্বারের নিকট উপস্থিত হইয়া শুনিলাম পিতা বলিতেছেন,—“ডাক্তার বাবু! এ যাত্রা আব রক্ষা নাই জানি । মেয়েটার জন্ত বড় ভাবনা হয় । তার বিয়ে দিয়ে যেতে পারলে আর কোন দুঃখু থাকত না।” পিতার কণ্ঠস্বর বেদন পূর্ণ। তাহার উত্তরে ডাক্তার বাবু যাহা বলিলেন তাহা শুনিয়া আমার সমস্ত শরীয় থর থর করিয়া কঁাপিতে লাগিল । তিনি পিতাকে জানাইলেন ষে আমার রূপে তিনি মুগ্ধ পিতার সম্মতি পাইলে আমাকে তিনি বিবাহ করিতে প্রস্তু ত । সবিস্ময়ে পিতা বলিলেন “আপনি— ভদ্রলোক-চাষার মেয়ে বিয়ে করবেন ?” তত্ত্বরে তিনি পিতাকে জানাইলেন, তিনিও ত