পাতা:ভারতী কার্তিক-চৈত্র ১৩২০.djvu/২৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সৃষ্টি করিতে আরম্ভ করিয়াছিল সে প্রথমে ইঙ্গিত ইসার হইতে আরম্ভ করিয়া, যেমন কোষের সমবায়ে জীবদেহ প্রস্তুত হয়, সেইরূপে এক একটি কথা নিৰ্ম্মাণ করিয়াছিল এবং পরে তাহার সন্তানের সমস্ত ভাষাটাকে ক্রমশঃ গড়িয়া তুলিয়াছিল। কেহ কেহ (১) বলিয়া থাকেন বাকৃশক্তি মানুষ এককালেই লাভ করিয়াছিল। প্রকৃত বিজ্ঞানের সহিত এই মতের যে সম্পর্ক, এই পৃথিবী ঈশ্বরের আদেশে ছয়দিনে স্বল্প হইয়াছিল, এ মতেরও সেই সম্পর্ক । কবিতার হিসাবে দুইই বেশ । কিন্তু বিশ্বনিয়মের যথার্থ মার্গানুসন্ধিৎসু বিজ্ঞানের নিকট উক্ত মতের কোন বস্তুত্ব নাই। যে অনুসন্ধানের দ্বারা বিজ্ঞান বিশ্বস্থষ্টি সম্বন্ধে উক্ত কবিত্বসুলভ মতকে অসত্য বলিয়া প্রমাণ করিয়াছে, সেই অনুসন্ধানের দ্বারা উহা ভাষা স্বষ্টি সম্বন্ধে প্রাচীন মতকেও ক্রমশঃ বিদূরিত করিতেছে। ভাষা যে বিশ্বনিয়মের বহিভূত ইহা কখনই সম্ভব হইতে পাবে না। এ সম্বন্ধে যথেষ্ট প্রমাণও সংগৃহীত হইয়াছে। অভিব্যক্তি যেমন কোন জ্ঞানের মন্দিরে প্রবেশ করিয়াছে, অমনই সে তাহার একটু না একটু পরিবর্তন করিয়াছে। এই যাদুকর ভাষাতত্ত্বকে যখনই স্পর্শ করিয়াছে, তখনই উহা একটি বিশিষ্ট বিজ্ঞানে পরিণত হইয়াছে। এক্ষণে ভাষার উৎপত্তি সম্বন্ধে আলোচনা করিতে গেলে প্রথমে মানুষের সম্বন্ধে কিঞ্চিৎ আলোচনা করা আমাদের আবশুক। কোন্‌ অবস্থার অধীনে পড়িয়া মানুষকে কথা বলিতে বাধা তে ছিল, কোন নিয়ে যায় তাহার প্রথম বাক্যাবলীর স্বষ্টি করিয়াছিল এবং কিরূপে মানুষ তাহার সেই আদিম ভাষাকে সংস্কৃত করিয়াছিল, এই সমস্ত আমাদের আলোচ্য বিষয় । অভিব্যক্তির সঙ্গে সঙ্গে জীবসকল জীবন-সংগ্রামে আত্মরক্ষার্থ সমাজবদ্ধ হইয়া বাস করিতে বাধ্য হইয়াছিল। আমরা দেখিতে পাই হরিণ, বানর, পক্ষী এবং এমন কি মৌমাছি পিপীলিকা পৰ্য্যন্ত সকলেই দলবদ্ধ হইয়া, সমাজ প্রস্তুত করিয়া বাস করে। ইহা হইতে বেশ বুঝা যায় যে জীবন-সংগ্রামে সামাজিক জীবনই শ্ৰেয়ঃ। এই যে সমবায়, ইহা দৈহিক শক্তি সংগ্রহের নিমিত্ত। কিন্তু মানসিক বল ংগ্রহ ও জীবনযুদ্ধে জয়ী হইবার প্রকৃষ্ট উপায় অন্ততর। মনে কর, কতকগুলা হরিণ এক মাইল স্থান ব্যাপিয়া বিস্তৃতভালে ঘাস খাইতেছে। ইহাদের সকলেরই দৈহিক বল, চক্ষু, কর্ণ, নাসিক, জিহবা সমস্তই আছে । প্রত্যেকেরই দেখা শুনা প্রভৃতি স্ব স্ব জীবনরক্ষার্থ যাহা কিছু প্রয়োজন, সমস্তই আন্থে । কিন্তু জীবন-সংগ্রামে শুধু এরূপ শক্তিই যথেষ্ট নহে। কারণ যখন উপস্থিত হইবে, তখন অন্তান্ত সঙ্গীরা অপনাপন জীবন রক্ষার্থ পলায়ন করিবে এবং আক্রান্ত হরিণকে তখন আপন অদৃষ্টের উপর নির্ভর করিতে হইবে। পরন্তু যদি তাহারা সকলে অনর্থ দূর করিবার জন্ত পরস্পরকে সাহায্য করে, তবেই সেই

(3) “Our first parents received it by immediate inspiration.”—Encyclopoedia Britannica, 8th. Edition.