পাতা:ভারতী কার্তিক-চৈত্র ১৩২০.djvu/২৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৭শ বর্ষ, নবম সংখ্যা ভ্রাতা-ভগিনীর চিত্ত আত্মগ্নানিতে পূর্ণ হইয়া উঠিত। এইরূপ অযথা কল্পনা জল্পনা ও জটিল বিভীষিকার ছায়ায় শঙ্কিত চিত্ত, উত্তরোত্তর কণ্টক গুন্মে আচ্ছন্ন হইয়া পথ হারাইয় অন্ধের মতই ফিরিতেছিল। জেনারলের সহিত শেষ সাক্ষাতের দুই দিন পরে একদিন সকালবেলা, একটি ধীবব বালক একখানি পত্র আনিয়া দিল, বলিল, গাছের মধ্যে যে মস্ত কোঠাটা আছে, সেই কোঠারই একটি বৃদ্ধ নারী তাহাকে পত্রখানি, আমাকে দিবার জন্ত দিয়াছে। রমণীর বর্ণনা যতটুকু জানিয়া লইলাম, তাহাতে আন্দাজ করিলাম সে জেনারলের রন্ধনকত্রী ছাড়া অপর কেহ নহে! পত্ৰখানি এই— আমার প্রিয়তম বন্ধুগণ ! আমাদের সাক্ষাৎ বা সংবাদ না পাষ্টয়া তোমরা যে আমাদের কথা ভাবিয়া উৎকষ্ঠিত রহিয়াছ, এই ভাবনায় গেব্ৰিয়েল ও আমি আন্তরিক দুঃখিত । আমরা এখন বন্দী ! বন্দী বলিতে যে সাধারণ অর্থ বুঝায়—আমরা সেরূপ কোন শারীরিক শাসনের সহিত বন্দী নহি । আমাদের সুখ শান্তি-হীন দুর্ভাগ্য পিতার স্নায়বিক দুৰ্ব্বলতা দিন-দিন এত বৰ্দ্ধিত হইতেছে যে তিনি আমাদের নিকট,— সস্তান আমরা, তাহার শাসনের পত্রি,— তথাপি তিনি সকরুণ মিনতির সহিত আমাদের নিকট প্রার্থন জানাইয়া ছিলেন যে, ৫ই অক্টোবর পর্য্যস্ত আমরা যেন কাহারও সহিত মেলা-মেশা না করি,— তাহাকে ভয় হইতে মুক্ত রাখি!” নতজানু হইয়া, তাহার নিকট আমরা প্রতিজ্ঞ সৌধ-রহস্ত wow wow or করিয়াছি, তাহার আদেশ আমরা সম্পূর্ণরূপেই পালন করিব। ওয়েষ্ট,—অকৃতজ্ঞ সন্তান আমরা,তাই এমন স্নেহময় করুণ-হৃদয় পিতারও আশঙ্কার কারণ হইয়াছি । হায়, যদি তাহার মানসিক যাতনার এতটুকুও লাঘব করিতে পবিতাম ! বাবা বলিয়াছেন, ৫ই অক্টোবর কাটিয়া গেলে তাহার পরদিনই তিনি আমাদের পরিপূর্ণ স্বাধীনতার সহিত মুক্তি দিবেন, বাতাসের মতই স্বাধীন জীবন ; কিন্তু কে জানে কেন আজ আর সে কথা মনে করিয়া যতখানি আনন্দ উপভোগ করা আমাদের উচিত ছিল, সে আনন্দ মনে মাসিতেছে না। স্বাধীনতা ? কে জানে— এ মুক্তি প্রার্থনীয় কি না ! আমরা আশঙ্কিত হইতেছি । ৫ই অক্টোবর যে বাবার ভয় চরম সীমায় দাড়াইবে গেব্রিয়েল বলিল, সে কথা, সে ইতিপুৰ্ব্বেই তোমায় জানাইয়াছে। বাবার ভাব দেখিয়া মনে হয়—র্তাহার দৃঢ় বিশ্বাস– এবারকার ৫ই অক্টোবর তাহার দুর্ভাগ্য পরিবারের কল্পিত বা বাস্তব বিপদ বহন করিয়া আনিতেছে। এবার আর প্রতি বৎসরের মত শুষ্ঠ হস্তে সে ফিরিঞ্চ বাইবে না। সেই জন্তই এবারকার রক্ষার জায়েজনও এই অধিক। তিনি যেন উন্মাদেরঙ্ক সংজ্ঞ হইয়া পড়িয়াছেন । র্তাহার এই জীৰশ্নত অবস্থা দেখিয়া অসহ যন্ত্রণ হইতেছে । র্তাহার এখনকার এই কম্পিত বক্র দেহ, সভয় দৃষ্টি দেখিয়া কে মনে করিতে পরিবে,—এই মানুষই কিছুদিন পূৰ্ব্বে তরাইয়ের জঙ্গলে পদব্রজে সাক্ষাৎ মৃত্যু-তুল্য প্রকাণ্ড প্রকাও ব্যাঘ্র শীকার করিয়াছেন,