পাতা:ভারতী কার্তিক-চৈত্র ১৩২০.djvu/২৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৭শ বর্ষ, নবম সংখ্যা আমি দুরুদুরু বক্ষে অনুভব করিতেছিলাম। জানালা সাণীর উপর চটপটু শব্দে পাথরের কুচা ও কঙ্কর উড়িয়া পড়িতেছিল । বাতাসের সে সে, গে। গে। শব্দ যেন শববিদ্ধ উন্মত্ত বন্ত জস্তুর গর্জন ধ্বনির মতই শুনাইতে ছিল । সৈকতোপবিষ্ট ভয় কাতর নিশাচরী পক্ষীর দল ঝটপট করিয়া উড়িয়া চলিয়াছে, বজের ভীষণ শব্দের সহিত ভীত সমুদ্র-পক্ষীর সকরুণ ক্ষীণ ক্ৰন্দন-ধ্বনি মিশিয়া, জগতে এক বিষম বৈষম্যের স্বষ্টি করিয়া তুলিয়াছিল। বাহিরে প্রকৃতির অনাবৃত প্রাঙ্গণ-তলে মিত্যকালেব যে মহান ধ্বনি অনাদি-কাল হইতে মানব-অন্তরে বাজিতেছিল, আজ মৃত্যু নিশার বিচিত্র সমবেত বাদ্য-ধ্বনিতে মিশ্রিত হইয় তাহাও যেন ডুবিয়া গিয়াছে। জানালাটা খুলিয়া একবার বাহিরের দিকে চাহিবার চেষ্টা করিলাম, সজোর বাতাসে কতকগুলা সমুদ্রের গাজল আর একটা ভগ্ন ঝাউয়ের শাখা বেগে কক্ষ-নিম্নে আসিয়া পড়িল । কঙ্করাঘাতে আহত চক্ষু মুদ্রিত রাখিয়াই প্রাণপণ শক্তিতে আবার জানালাট বন্ধ করিয়া দিলাম। গুরু গুরু মেঘ-গৰ্জ্জনের সহিত মধ্যে মধ্যে তখন বিদ্যুৎ হানিতেছিল । ঝড়ের গর্জনে তরঙ্গেব আস্ফালনে বাহিরের সকল শব্দই ডুবিয়া যাইতেছিল । বাবা ও এস্থার তাহদের নিজ নিজ শয়ন-কক্ষে ! ঘুমাইয়াছেন কি ? আমি অগ্নিকুণ্ডের নিকটে চেয়ারে বসিয়া সিগাবেট টানিতে টানিতে দেখিতেছিলাম,— প্রকৃতির ভীষণ তাণ্ডব নৃত্য,—আর ভাবিতেছিলাম এই মৃত্যু-রজনীর ভীষণতার দিকে চাহিয়া সৌধ-রহস্ত ఫిసెసె এ সময় গেব্ৰিয়েল কি করিতেছে ? আর সেই বৃদ্ধ,—অকাবণ-ভীত সংশয়াকুল চিত্ত কুমবার স্বামী ? প্রকৃতির এই স্বষ্টি-সংহারক ভীষণতাকে কি তিনি আপনার অন্তরের বিপদ সম্ভাবনার সহিত মিলাইয়া কোম আসন্ন বিপৎপাতের কল্পনায় একেবাবে দারুণ ভয়ে আক্রান্ত হইয় পড়েন নাই ? মধ্যস্থলে আর দুইটি দিবা-রাত্রি আটচল্লিশ ঘণ্টার ব্যবধান, তাহার পবেই নবীন স্বৰ্য্যালোকে আবার নব জগতে প্রবেশ-লাভ । এই ঝটিকাব অবসানে আবার স্বৰ্য্যোদয় হইবে, আবার ধরণী বর্ণে গন্ধে হাস্তে উৎসবে মুখবিত পুলকিত হুইয়া উঠিবে, অন্ধকারের পর আলোক, জীবনের পর মৃত্যু, দুঃখের পর মুখ কি বিচিত্র এই লীলা, আর কি বৈচিত্র্যপূর্ণ এই স্বষ্টি ! জেনারেল আশঙ্কা করিয়াছেন, ৫ই অক্টোবর তাহার অনিশ্চিত ভাগ্য-রহস্তের নিশ্চিৎ সিদ্ধান্ত ঘটিয়া যাইবে ! এই বিশ্বব্যাপী বিদ্রোহের বেগ তাহার অন্তরাত্মাকে কতখানি বিচলিত করিয়া তুলিয়াছে। তিনি কি ভাবিতেছেন– এই সহসা-আগত ঝটিকার সহিত র্তাহার জটিল ভাগ্য স্থত্রের কোন স্বক্ষ ংশ জড়িত হইয়া রহিয়াছে ! এই সব সত্য মিথ্যা বাস্তব অবাস্তব বিষয়, এবং আরও অনেক অবাস্তর বিষয়ের চিন্তা আমার আলোড়িত মস্তিষ্কের মধ্যে যাতায়াত করিতেছিল। অগ্নিকুণ্ডের কাঠথগুগুল জলিয়া জলিয়া নিবিয়া গেল,সেই নিৰ্ব্বাপিত বহি-পীতধূম অগ্নিস্ফুলিঙ্গের উপর ভগ্নাবশেষ সিগারটা—নিক্ষেপ করিয়া