পাতা:ভারতী কার্তিক-চৈত্র ১৩২০.djvu/৩০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৭শ বর্ষ, নবম সংখ্যা অমানুষিক আইন দক্ষিণ আফিকার ভারতবাসীকে উন্মত্ত প্রায় করিয়া তুলিয়াছে । তাহার রোধে, ক্ষোভে, ঘৃণায় উত্তেজিত হইয়৷ এই আইন দূর করিবার জন্ত প্রাণ বিসর্জন করিতে উদ্যত । সমগ্র ভারতনারীসমাজের প্রতি একি ঘোর অবমাননা । ভারতবর্ষের নারীত্বের প্রতি একি ঘৃণ। অত্যাচার । সীতা, সাবিত্রী, দময়ন্তী, পদ্মিনীর জন্মভূমির কন্যাগণের প্রতি একি নিদারুণ, নিষ্ঠুর অপমান! ভগিনীগণ ! আমরা মৃত, আমরা কুহমশয্যায় শুইয়৷ আরামে, আয়াসে দিন . কাটাইয় দিই বলিয়া নারীর এই অপমানের কথা বিস্মৃত হইয়া আছি। বিদেশে আমাদের ভগিনীগণের মস্তকে যে অপমানের জ্বালা পুঞ্জীকৃত হইয়াছে, আমরা কি তাহার এক বিন্দুও অক্ষরে অনুভব করিতে পারি? কিন্তু সেই স্বদুর বিদেশে অত্যাচাবে পীড়িত, অপমানে জর্জরিত, আমাদেরই ভগিনীগণ অপমানের প্রতিশোধ লইবার জন্ত যে জ্বলন্ত আত্মে: ২সর্গের দৃষ্টান্ত দেখাইতেছেন তাহ অতুলনীয়। মিঃ গান্ধির জেলে যাইবার পূৰ্ব্বে মিসেস গন্ধির সহিত র্তাহার যে কথোপকথন হয় তাহ একান্তই হৃদয় বিদারক । মিসেস গান্ধি বোধে, ঘৃণায় উত্তেজিত হইয়৷ বলিয়াছিলেন, “এ দেশের আইনানুসারে আমরা ত স্বামী স্ত্রী নই। আমাদের সন্তানেরাও অবৈধ। যে দেশের এমন ঘৃণ্য আইন, চল সে দেশ হইতে চলিয়া যাই ।” মিঃ গান্ধি বলিলেন, “ন, তাহীত হইবে না । এই আইন রহিত করিয়া ভারতবাসীর অপমান দূর করিতে আমাদিগকে এখানেই থাকিতে হইবে।” মিসেস গান্ধি বলিলেন, “তুমি জেলে গেলে, আমার জীবন ধারণের সার্থকতা কি ?” ইহার পরই মিসেস গান্ধিও সংগ্রামের রক্ত পতাক উদ্ভট্টীন করিয়া দিলেন, আর দলে দলে নারীগণ আপনাদের মান, মর্য্যাদা রক্ষা করিবার জন্তু তাহার তলে মিলিত হইলেন। উপরিউক্ত পশুজনোচিত আইন অমান্ত করাতে মিসেস গান্ধি, উাহার দুই পুত্রবধু এবং অস্তান্ত কত রমণী আজ করাগারের নিষ্ঠুর পীড়নে জর্জরিত হইতেছেন। উল্লিখিত আইন ব্যতীত ভারতবাসী সম্বন্ধে আরও নান প্রকার অপমানসূচক আইন বিধিবদ্ধ আছে। ভারত সাময়িক প্রসঙ্গ ריסי • ל বাসীকে এক প্রদেশ হইতে অঙ্ক প্রদেশে যাইতে হইলে দশ আঙ্গুলের দশটি ছাপ এবং দুই হাতের দুইটি ছাপ এই বারটি ছাপ দিতে হয়, আইনে ভারতবাসীকে সৰ্ব্বত্রই কুলি বলিয়া লিখিত আছে। যাহার কুলি স্বরূপ চুক্তিতে আবদ্ধ হইয়৷ তথার গমন করেন নাই এমন সব স্বাধীন ব্যবসায়ী ভারতবাসীয় কুলি বলিয়া আইনে আখ্যাত হইয়াছেন। ভারতবাসী হইলেই উtহার কুলি, আর তাহীদের চোর, ডাকাত প্রভৃতির সামিল কর হইয়াছে। ভারতবাসীর ফুটপথে হাটবার অধিকার নাই। যে ট্রামে, ট্রেনের যে কক্ষে কোন ইউরোপীয় যাইতেছেন তাহাতে ভারতবাসীর চড়িবার অধিকার নাই । ব্যবসা করিবার জন্ত ভারতবাসীকে প্রায়ই লাইসেন্স দেওয়া হয় না । শতবার আবেদন নিবেদনে পরিশ্রান্ত হইয়া মিঃ গান্ধি ১৯১৬ খ্ৰীষ্টাব্দে এক মহতী সভায় ভারত প্রবাসীদিগকে এই প্রতিজ্ঞ করাইয়। লন, এই যুণ্য অপমানজনক পশিব অাইন মাস্ত করা অপেক্ষা অমর কারাগারের যাতন সহ্য করিব । যতদিন ন| এই দুঃসহ অত্যাচার নিবারিত হয়, যতদিন না ভারতবাসীর ইজ্জত রক্ষিত হয় ততদিন আমরা এই দেশের বে-আইন মানিব না এবং তাহার ফল স্বরূপ যে দণ্ড ভোগ করিতে হয় করিব । ইহাই দক্ষিণ আফি,*H, passive resistance—oo olfson প্রতিরোধের কারণ। এই সংগ্রামের ফলে এ পর্য্যন্ত ভারতবাসিগণ ৩ হাজার ৫ শত বার কারাদণ্ড ভোগ করিয়াছেন, এক শত লোক নিৰ্ব্বাসিত হইয়াছেন, শত শত পরিবার ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হইয়াছে এবং সমগ্র সম্প্রদায় আজ পথের ভিখারী । আজি কত পরিবারের উপাৰ্জ্জনক্ষম পুরুষ কারাগারে আবদ্ধ বলিয় রমণীগণ অসহায়, শিশু সন্তান অনাহারে মৃত প্রায়। খনির মালিকগণ খনি গুলিকে জেলখানায় পরিণত করিয়াছেন, আর তাহার। হইয়াছেন জেলার । কুলিদিগকে সেইখানে আবদ্ধ করিয়া রাখিয়ছেন। জেলের আইনানুসারে কোন কয়েদী অবাধ্য হইলে জেলার তাহীকে গুলি করিয়া মারিতে পারে এবং ইচ্ছামত বেত্রাঘাতে জর্জরিত করিতে পারে। খনিগুলি জেলখানায় পরিণত করাতে এই ফল হইয়াছে যে খনির মালিকগণ ইচ্ছামত কুলি