পাতা:ভারতী কার্তিক-চৈত্র ১৩২০.djvu/৩১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ֆ ք 8եր বিশ্বাস আছে কিনা জানি না কিন্তু আমার ঐকাস্তিক আগ্রহে আমি সেই চতুর্দশ দিবসের মধ্যেই বঁাশী বাজাইতে শিপিয়াছিলাম। কেবল চতুর্দশ দিবসে বলিলে ভুল হয়—চতুর্দশ দিবারাত্রির মধ্যে আমি বাশ বাজাইতে শিখিয়াছিলাম । সে সময়ে আমার আহার নিদ্র ছিলনা,—শুধু বাণী, বঁাশী আর বঁাশ । কি করিয়া শিখিলাম শুনিবে ? প্রথম যেদিন রামদীন আমায় নিরাশ সাগরে ভাসাইয়া দিল তাহার পরদিন প্রাতে আমরা দুইজনে ভ্রমণ করিতে করিতে অদূরে এক কৃষক যুবককে দেখিতে পাইলাম। সে গরুগুলি ছাড়িয়া দিয়া এক মনে বঁাশী বাজাইতেছিল। আমরা তাহার নিকট উপস্থিত হইলাম ! সেই আমার গুরু। তাহার নিকট সেই দিবস কয়েকটা কৌশল শিখিয়া লইলাম। তাহার পর একটী নির্জন উৎসের ধারে বসিয়া ক্রমাগত সাধনা করিতে লাগিলাম । বঁাশ বাজাইতে শিখিলাম বটে কিন্তু মস্তিষ্ক ঠিক রাখিতে পারিলাম না ;—বিকৃতি ঘটিল । বঁাশী বাজানই আমার বাতুলতার প্রধান লক্ষণ হইয়া পড়িল । পুর্ণ তিন বৎসরকাল —অহরহ আমি বঁাশী বাজাইতাম । রামদীন আমায় ত্যাগ করে নাই । যুদ্ধের অবসান লইলে আমরা রাজধানীতে গমন করিলাম। বাশী বাজাইয়া সেখানে জামি জীবিকার্জন করিতে লাগিলাম। ভারতী পৌষ, ১৩২০ বঁাশই তখন আমার আত্মা । আমার মনে হইত আমি এবং আমার বঁাশী উভয়ের মধ্যে কেবল দৈহিক পার্থক্য বিদ্যমান । তাহার প্রতি অংশ আমারই অস্তিমজ্জা বলিয়া মনে হইত । একট্রি রাজসভায় আমার ডাক পড়িল। মুসজ্জিত সভাগৃহে দেশের গণ্যমান্ত সকল লোকই উপস্থিত ছিলেন। আমি বাজাইতে লাগিলাম। কখনও করুণ কখনও হাস্ত কখনও রুদ্ররসে সভাগৃহ বিচলিত করিয়া তুলিলাম। সমবেত কণ্ঠে আমার যশঘোষিত হইল। এই ভাবে আরও দুই বৎসর কাটিয়া C 1 সেই দুই বৎসর পরে রামদীন আমায় ত্যাগ করিয়া একাকী পরলোকের পথে যাত্রা করিল। তাহার মৃত মুখ দেখিয়া আমি যেন ঘোর নিদ্রার পর সহসা সচেতন হইয় উঠিলাম । শবের পাশ্বে দাড়াইয়া বঁাশীট একবার করুণ মুরে বাজাইতে চেষ্টা করিলাম কিন্তু আশ্চর্য্যের বিষয় তাহ পারিলাম না । কোথায় ওষ্ঠ ম্পর্শ করিয়া ফুৎকার দিতে হয়, কোন স্থান টিপিয়া ধরিতে হয়, কখন কোন অঙ্গুলি তুলিতে হয় শত চেষ্টাতেও তাহ আর আমি মনে আনিতে পারিলাম না । এখন আমি গীতবাদ্যে একেবারেই অজ্ঞ, অক্ষম ! ঐহরপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়।