পাতা:ভারতী কার্তিক-চৈত্র ১৩২০.djvu/৩৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৭শ বর্ষ, দশম সংখ্যা নীচেই পড়িয় আছে। তবে বিষ খাইয়াছে নাকি ? গলায় দড়ি দেয় নাই তো ? দ্রুতপদে উপবে উঠা সজোরে দরজায় ধাক্কা দিতে দিতে বিহবল কণ্ঠে ডাকিতে লাগিল “কমূল, কমল দরজা খোল, শোন ?” পুনঃ পুনঃ আহত হইয়া দ্বাবের খিল ভাঙ্গিয় খুলিয়া গেল। উৰ্দ্ধশ্বাসে ঘরে ঢুকিয় সে ভীত নেত্ৰে চারিদিকে চাহিয়া দেখিল—ওই না কমল থাটের দাণ্ড ধরিয়া দাড়াইয়া আছে! ছুটিয়া কাছে আসিল—কই কিছু তো পরিবর্তন দেখা যায় না ! উদ্বেলিত বক্ষে কহিল “কিছু করনি তো ?” উত্তর না পাইয়া সবলে তাহার একটা হাত চাপিয়া ধরিল “বলে৷ বলো বলে ।” হাত ছাড়াইবার চেষ্টায় কমলা স্থির কণ্ঠে কহিল “না।” —যথেষ্ট। “কমল ! এ রকম কেন করচো ?” কমলা সরিয়া দাড়াইল, সে নেত্রে একটা স্থল না হোক সুহ্ম দাহিকা শক্তি বিদ্যমান ছিল শচীকান্ত হাত ছাড়িয়া কিছু হটয়া গেল । ক্ষোভের সহিত সে কহিল “কমলা আমার সঙ্গে তুমি কিন্তু অন্তায় ব্যবহাব করচে, বলে দাও তোমার কাছে আমার কি অপরাধ ? নিষ্ঠুব মামার কাছ থেকে উদ্ধার করায় কৃতজ্ঞতাও কি একটু নাই ? একদিন তো তুমি এ কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছিলে ?—সেদিন ওই জড় বালা ছগাছা যে আদর পেয়েছিল তার একটু কণাও কি আজ আমি পেতে পারি না ? শুধু অবহেলা কববে ? কেন. তোমার তো আমি কোন ক্ষতি করিনি !” এত কথা বুঝি তাহার কর্ণে প্রবেশ করিল না, সাপে কামড়াইলে যে অবস্থা হয় কমলাকে বাগদত্তা eళీeరి . ঠিক সেই অবস্থাপন্ন দেখাইল। সে যে এতদিন কি ভুল স্বপ্ন দেখিতেছিল,-কি মন্ত্রে কাহাকে পূজা করিয়াছে তাহ আজ ধরা পড়িয়া গিয়াছে। মুহূর্তে সে হস্তস্থ কঙ্কন দুগাছ খুলিয়া সবেগে ভূমে নিক্ষেপ করিল। সেই সঙ্গে এমনি করিয়া আছড়াইয়া নিজেকে চূর্ণ করিবার প্রবল ইচ্ছাটাই শুধু জোর করিয়া চাপ রখিল। হায় আশা ! হায় প্রতীক্ষা ! সবই ব্যর্থ হইয়াছে ! আগাগোড়া সবই ভুল ! মনীশের প্রতিও একটা অসহায় ক্রোধে বুকের মধ্যে ধুধু করিতে লাগিল। নিষ্ঠুর | নিষ্ঠুর ! এতটুকু শেষ স্মৃতির মুখও তুমি তাহাকে দিলে না ! শচীকান্ত এ ব্যবহার দেখিল— তাহার মৰ্ম্মে ঘা পড়িয়াছিল। কিছুক্ষণ সেই অনাদৃত উপহারের পানে তাকাইয়া থাকিয়া অবশেষে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলিয়া মুখ তুলিল— “বুঝেছি তুমি ভুল বুঝেছিলে,--মনে করেছিলে মনীশের এই উপহার! তাই তার অত সম্মান ! তখন আমি নিজের স্বপ্নেই ভোর তাই ভাবিও নাই এরও অপর অর্থ থাকা সম্ভব ! হরি হরি মনীশ কিনা সেই রকম ! সে যাই হোক তার সঙ্গে তোমার সম্বন্ধ কি জিজ্ঞাসা করি ? তোমার দাদা আমার সঙ্গে তোমার বিবাহ দেবেন বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। পরে মনীশের কাক আমার সঙ্গে ঝগড়ায় তাদের বাক্‌দান ফিরিয়ে নেন,—তুমি ধৰ্ম্মতঃ আর এখন লোকতঃ আমারই কমলা । কমলা ! অতীত ডুবে যাক ভুলভ্রান্তি মিটিয়ে ফেল, বারে বারে আর আঘাত করেন । অনেক প্রাণের জালা আছে তুমি যদি একটা মিষ্ট কথা বল সব জুড়িয়ে যায়—”