পাতা:ভারতী কার্তিক-চৈত্র ১৩২০.djvu/৩৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

:) esto 8 কে কোথায় ? পাষাণী উপেক্ষার বাণে সব ব্যাকুলত কাটিয়া চলিয়া গিয়াছে। পরদিন শচীকান্ত কমলার সহিত সাক্ষাৎ করিয়া বলিল—“আমায় দেখে ভয় পেয়ে না, আমি তোমায় কোন অপ্রিয় কথা বলতে আসিনি । আমার মধ্যেও একটা মানুষের প্রাণ আছে, তুমি সেইখানে আঘাত করেছ। আমি বলতে এসেছি তোমার অনাহাবে অনিদ্রায় কষ্ট পাবাব দবকার নেই, আমি তোমার পবে সকল দাবী ছেড়ে দিলাম । যেদিন তুমি নিজের ব্যবহারে লজ্জিত হবে সেই দিন আবার তোমার কাছে এসে দাড়াব । সেদিন যত দেরিতেই আসুক,— একদিন আসবে এ আমি তোমায় বলে রাখচি। আর আমিও সে জন্ত প্রতীক্ষা করতে অসহিষ্ণু হবে না। একদিন তোমার এই ব্যবহারের জন্ত অমৃতপ্ত হতে হবে, সেদিন তুমি বুঝতে পারবে তুমি মনীশের নও আমার ।” মামুষের সুখ দুঃখ দিয়া নিয়মের কোন ব্যত্যয় করা যায় না। এই আকর্ষণহীন, নিরানন্দ নিৰ্ব্বান্ধব গৃহে কমলার দিন কাটিতে লাগিল। আশাহীন, প্রতীক্ষণহীন, কৰ্ম্মহীন দীর্ঘ অবসর, যদিও কাটিতে বাকি থাকে না, তথাপি যেন ক্রমেই তাহ অসহাপেক্ষ অসহনীয় হইয়া উঠিতেছিল। মানুষের একটা কিছু চাই, কিন্তু তাহার কোথায় কি ! ঘর ংসার অাছে, তাহার কৰ্ম্মকাজও নাই এমন নয়, করিলে সবই আছে কিন্তু করিবার ইচ্ছাই যে নাই, তাই জগতে কিছুই নাই। আছে শুধু অনন্ত চিন্তা সমুদ্র! সীমাহীন ভাবনায় আপনাকে ভাসাইয়া দিয়া অব্যক্ত বুকটা যন্ত্রণায় কেবলমাত্র লুষ্ঠিত হওয়া ভিন্ন আর কিছু নাই। গভীর ভারতী মাঘ, ১৩২• অভিমানে সারা প্রাণ ঘুরিতে থাকে, বিশ্বাস শিথিল হইয় আসে, দুই হাতে মুখ ঢাকিয় কাদিয়া বলে এই তোমাৰ দয়া ! এই বিচার তোমার ! কে বলে তুমি দয়াময় ! নিষ্ঠুর, পাষাণ তুমি ! কি পাপে আমার এ দুর্গতি করিলে ! আবার মধ্যে মধ্যে কুহকিনী আশা আশাইন চিত্তে কুহকের আলোক জালাইয়া তুলে, নিরাশান্ধকার বর্তমানের মাঝখানে অতীত আসিয়া দেখা দেয়। সেই আশ্বাসবাণী কাণে বাজিয়া উঠে, মনের মধ্যে আশ্বাস সংগ্ৰহ করিয়া সে দৃঢ়চিত্তে ভাবে, নাই পাইলাম, এ জীবনের শেষে আর কি কিছুই নাই ? সারাজীবনের পূজায় কি সেখানেও পাইব না ? এ সম্বন্ধ কখনও ভাঙ্গিবে না। গৃহিণীর কথা মনে পড়িয়া যায়, সেই একটি সাধনাব সঙ্কেত মনে জাগে, আকুল অশ্রজলের আবেগে রুদ্ধকণ্ঠে করযোড়ে বলে “যেন পাই ঠাকুর, আর যেন বঞ্চিত হইতে না হয়,—সেখানে যেন পাই ” দিনের পর দিন কাটিতে থাকে, রাত্রি নীরবে চলিয়া যায়। শচীকান্তেরও দিন কাটে । সমস্ত দিন আফিসের কাজে হাফ লইবার অবসর সে রাখে না । চারিদিকের উদ্দীপনার মধ্যে সুখ দুঃখ ডুবাইয়া কেবল কাজ করে ! টেবিলের উপর বামবাহু স্থাপন করিয়া দক্ষিণ হস্তে অবিশ্রান্ত কলম চালাইয় গাদা গাদ তাড়াবন্ধী কাগজ লেখা হইলে সে যখন সন্ধ্যার পূৰ্ব্বে কিম্বা পরে কেদার ছাড়িয়া উঠে তখন মাতালের মত পা দুখান টলিয়া পড়িতে থাকে। তার পর ললাটের ঘৰ্ম্ম মুছিয়া টমটমে চড়িয়া যখন বাড়ীর দিকে ঘোড়ার বল্লাটা টানিয়া ধরে তখন ঠিক তাহার মনের