পাতা:ভারতী কার্তিক-চৈত্র ১৩২০.djvu/৩৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৭শ বর্ষ, দশম সংখ্যা আসিলাম তখন উষার ক্ষীণ আলোক, রোগীর মুখের পাণ্ডুর হাসিটুকুর মতই, ধীরে ধীরে পূৰ্ব্বগগনে ফুটিয়া উঠিতেছিল। চঞ্জ ডুবিয়া যাইতেছে, বহুদূৰ্বব্যাপী মরুময় বাহু ভূমিকে আচ্ছন্ন করিয়া ক্ষীণ জ্যোৎস্না শুভ্র বসনের মত সমুদ্র তীরে বিছাইয়া রহিয়াছে। ঝড় থামিয়া গিয়াছে—কিন্তু সমুদ্র এখনও শাস্ত হয় নাই, তটপ্রহত উৰ্ম্মি ভঙ্গের গর্জন কল্লোল বাতাসের শব্দে মিশিয়া ভৈরব রাগিণীতে বিচিত্র সুরে বাজিতেছিল। ফেনকিরীটশীর্ষ তরঙ্গ গুলা ক্ৰোধোন্মত্ত শিকারীর দ্যায় পলাতক শী কারের সন্ধানে তখনও যেন ছুটাছুটি করিয়া ফিরিতেছিল। বায়ুর তাড়নে ও তরঙ্গাঘাতে যে সকল ভগ্ন মাস্তুল, ছিন্নপাল প্রভৃতি তীব্রাভিমুখে ভাসিয়া আসিতেছিল জেলের তাহাই একত্রে সংগ্ৰহ করিয়া রাখিতেছিল । ছোট ছোট ডিঙ্গিতে সমুদ্র তীর ভরিয়া উঠিয়ছিল, ভাসমান নষ্ট দ্রব্যাদির উদ্ধাব সাধনে সকলেই মনোযোগী ! আমরা জিজ্ঞাসা করিলাম “কোন মৃতদেহ তাহারা দেখিয়া ছ কিনা ?” তাহারা উত্তর দিল “না কৰ্ত্তা, যে সব হাল্কা জিনিষ ভাসতে পারে তারাই ঢেউয়ের চোটে ডাঙ্গায় এসে ছিটকে পড়চে,–কিন্তু যে সব ভারী জিনিষ নীচের টানে তলিয়ে যাচ্চে, তাদের সমুদ্রের পেটের ভিতরে ছাড়া আর জায়গা কোথায় ?” যে হতভাগ্য বিদেশী তিন জন সমুদ্র গর্ভে অনন্ত নিদ্রায় নিদ্রিত যদি তাহারা সমুদ্র গর্ভে নিমজ্জিত না হইত তাহা হইলেও স্রোতের টানে পৰ্ব্বত গাৱে আহত হইয়৷ চূর্ণ হইয়৷ সোধ-রহস্ত a e సిసి যাইত, যেদিক দিয়াই যাউক মৃত্যু তাহাদের অনিবাৰ্য্য ? বাড়ী ফিরিবার সময় বাবা অত্যন্ত দুঃখ পূর্ণ স্বরে ধীরে ধীরে কহিলেন মানুষের জ্ঞান কত ক্ষুদ্র,—শক্তি কত হীন তবু তাই নিয়ে তারা ঈশ্বরের কাযের উপর বিচার চালাতে চায় ? আহ, বেচার সহকারী কাপ্তেনটির •হঠাৎ বিপদে মাথাটি একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে! তুমি কি শুনেছিলে জ্যাক ? তিনি বলছিলেন যে সেই তিন জন বৌদ্ধ সন্ন্যাসীই— সমুদ্রে এই ঝড় তুলেছিল ? আমার বোধ হয় তার কানের নীচে শরষের পুলটিস্ লাগালে কিছু উপকার হতে পাবে । কিন্তু—তার চেয়ে আর এক কাজ কল্পে সহজে হয়—আমার ঘুমের সেই বড়ী দুটা তাকে থাইয়ে দিলে ছয় Fil " ক্লাস্তিতে আমার দেহ ভাঙ্গিয়া পড়িতে ছিল, ঘুমে চোখের পাতা বুজিয়া আসিতেছিল, হকিংসের বা কাপ্তেনের শারীরিক এবং মানসিক অবস্থার বিষয় চিন্তা কর। তখন আমার পক্ষে একান্তই অসম্ভব। আমি ক্লাস্ত স্বরে উত্তর দিলাম, আমার বোধ হয় আজ রাটি তাদের চুপ চাপ করে ঘুমুতে দেওয়াই সব চেয়ে ভাল । তার পর কাল সকালে উঠে ওষুধপত্র ব্লিষ্টার পীল ষা হয় ব্যবস্থা করা যাবে।” এ কথার পর বাবা আর কিছু না বলায় তাহাকে শয়ন গৃহে পৌছাইয়৷ দিয়া আমি টলিতে টলিন্তে শয্যা গ্রহণ কল্পিলাম, পরিচ্ছদ পরিবর্তন করিবার পর্য্যস্ত ক্ষমতা ছিল না। শয্যা গ্রহণের পর মুহূৰ্ত্তেই গভীর নিদ্রায় চৈতন্ত লুপ্ত হইয় গেল ।