পাতা:ভারতী কার্তিক-চৈত্র ১৩২০.djvu/৪২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৭শ বর্ষ, একাদশ সংখ্যা পাতা-ধর এবং পাতা-ঝরার ভিতরে ভিতবে এই সফলতার প্রবাহটি বরাবর চলে আসছিল, সেইজন্তই ফুলের উৎসব দেখা দিল, গাছের অমরতার পরিচয় সুন্দর বেশে প্রচুব ঐশ্বৰ্য্যে আপনাকে প্রকাশ করল। আমাদের হৃদয়ের মধ্যে সেই পরমোৎসবের ফুল কি আজ ধরেছে, তার গন্ধ কি আমধা অন্তরের মধ্যে আজ পেয়েছি ? আজ কি অন্ত সব ভাবনার আড়াল থেকে এই কথাটি আমাদের কাছে স্পষ্ট করে দেখা দিল যে জীবনটা কেবল প্রাত্যহিক প্রয়োজনের কৰ্ম্মজাল বুনে বুনে চলা নয়— তার গভীরতার ভিতর থেকে একটি পরম সৌন্দৰ্য্য পরম কল্যাণ পূজার অঞ্জলির মত উৰ্দ্ধমুখ হয়ে উঠচে ? না, সে কথা ত আমব সকলে মানিনে। আমাদের জীবনের মৰ্ম্মনিহিত সেই সত্যকে সুন্দরকে দেখবার দিন এখনো হয় ত আসেনি, আপনাকে একেবারে ভুলিয়ে দেয়, সমস্ত স্বার্থকে পরমার্থের মধ্যে মিলিয়ে তোলে এমন বৃহৎ আনন্দের হিল্লোল অন্তরের মধ্যে জাগেনি ;–কিন্তু তবুও তিনশো পয়ষট্টি দিনের মধ্যে অন্তত একটি দিনকেও আমরা পৃথক কবে রাখি, আমাদের সমস্ত অন্তমনস্কতার মাঝখানেই আমাদের পূজার প্রদীপটি জালি, আসনটি পাতি, সকলকে ডাকি, যে যেমন ভাবে আসে আসুক, যে যেমন ভাবে ফিরে যায় ফিরে যাকৃ। কেন না, এ ত আমাদের কারে একলাকার সামগ্ৰী নয় । আজ আমাদের কণ্ঠ হতে যে স্তব সঙ্গীত উঠবে সেত কারো একলা-কণ্ঠের বাণী নয় ; জীবনের পথে সম্মুখের দিকে ছোট ও বড় $(th যাত্রা করতে করতে মানুষ নানা ভাষায় র্যার নাম ডাকছে, যে নাম তার সংসারের সমস্ত কলরবের উপরে উঠেছে, আমরা সেই সকল-মানুষের কণ্ঠের চিরদিনের নামটি উচ্চারণ করতে আজ এখানে একত্র হয়েছি —কোনো পুরস্কার পাবার আশায় নয়, কেবল এই কথাটি বলবার জন্তে যে, তাকে আমরা আপনার ভাষায় ডাকৃতে শিখেছি মানুষের এই একটি আশ্চর্ষ্য সৌভাগ্য । আমরা পশুরই মত আহার বিহারে রত, আপন আপন ভাগ নিয়ে আমাদের টানাটানি, তবু তাবি মধ্যেই "বেদাহমেতং পুরুষং মহাস্তম্” আমরা সেই মহান পুরুষকে জেনেছি, সমস্ত মানুষের হয়ে এই কথাটি স্বীকার করবার জন্তেই উৎসবের আয়োজন । অথচ আমরা যে সুখসম্পদের কোলে বসে আরামে আছি তাই আনন্দ করচি তা নয় । দ্বারে মৃত্যু এসেছে, ঘরে দারিদ্র্য ; বাইরে বিপদ, অন্তরে বেদন ; মানুষের চিত্ত সেই ঘন অন্ধকারের মাঝখানে দাড়িয়েই বলেছে, “বেদাহমেতং পুরুষং মহান্তং আদিত্যবর্ণং তমস: পরস্তাৎ”—আমি সেই মহান পুরুষকে জেনেছি যিনি অন্ধকারের পরপর হতে জ্যোতিৰ্ম্ময় রূপে প্রকাশ পাচ্চেন। মনুষ্যত্বের তপস্যা সহজ তপস্যা হয় নি, সাধনার দুর্গম পথ দিয়ে রক্তমাখ পায়ে তাকে চলতে হয়েছে, তবু মানুষ আঘাতকে দুঃখকে আনন্দ বলে গ্রহণ করেছে ; মৃত্যুকে অমৃত বলে বরণ করেছে, ভয়ের মধ্যে অভয়কে ঘোষণা করেছে এবং রুদ্র যত্তে দক্ষিণং মুখং, হে রুদ্র, তোমার যে প্রসন্ন মুখ সেই মুখ মানুষ দেখতে