পাতা:ভারতী কার্তিক-চৈত্র ১৩২০.djvu/৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৭শ বর্ষ, সপ্তম সংখ্যা শোন ভাই আমি বেশি বলতে পারিনে, —কখনও বলিনি আজ বলচি আমি তোমায় যথার্থ ভালবাসি। প্রকৃত ভালবাসার চক্ষে প্রেমাম্পদের অপরাধ অতি নগণ্য, তাতে ব্যথা দিতে পারে কিন্তু ঘৃণা আনতে পাবে না । তুমি পাগল তাই ওসব কথা বলচো, কাকে আমি ঘৃণা করবো, তোমায় ? অসম্ভব ! আমি তো তোমার মহত্ত্বকে ভালবাসিনি, আশৈশব ভালবেসেছি তোমাকে । তোমাব দেহ, মন, আত্মা, ভালমন্দ সবটকে জড়িয়ে যে তুমি সেই তুমিই যে আমাব বন্ধু ! তোমাব মধ্যে যদি কিছু মহিমা থাকে সেও তোমার অংশ, আর যদি কিছু ক্ষুদ্রত থাকে তাও ত তোমা ছাড়া নয়। ঈশ্বব আমাদেব সবচেয়ে বড় বন্ধু তিনি তো আমাদের শত ভ্রান্তির জন্ত আমাদেব ঘৃণা কবে ছেড়ে যান না । না, কিছু বলে ন},— আমার উপর কোন অবিচাব করে থাকে;— সে চুকে গেছে আমি তাব কৈফিয়ৎ চাইনে।” মনীশ থামিল তাহার অস্তরের গোপন সমাচার হৃদয়ভাবেব বিপুলবিভবে পরিপূর্ণ হইয়া মধুর মুচ্ছ নাব মত তাগাব বন্ধুব বিহবল মস্তিষ্কে প্রতিধ্বনিত হষ্টতে লাগিল । দুজনের কেহই কয় মুহূৰ্ত্ত একটি কথা কহিতে পাবিল না, মনীশ মুখতন্ময়ভাবে কেবল চাহিয়া রহিল, আর শচীকান্ত মৰ্ম্মের ভিতর মরিয়া গেল । ঠাণ্ড বাতাসে জলসেকআদ্র মাটির গন্ধের সহিত মনীশের স্বহস্তরোপিত হাসনাহানার সুবাস বহন করিয়া গৃহ-অতিথির অর্ঘ্যরূপে আনিয়া দিল, ক্ষণস্থায়ী চন্দ্রাংশটুকু মসীবর্ণ আকাশের বিশাল উদর গহবরে ডুবিয়া যাইতে লাগিল, স্বপ্নোখিতবৎ সচকিত শচীকান্ত মাথা বাগদত্ত ৪৭৩ তুলিয়া মনীশের মুখের দিকে চাহিল "কিন্তু তুমি আমাব পাপের কথা শুনলে ভাল করতে, এখনও উপায়—” মনীশ সবটা শেষ হইতে দিল না, সে কহিয়া উঠিল “তুমি বাড়াবাড়ি করলে ওই কথা ভিন্ন আর কোন কথাই কইবে না, দাড়াও আমি খুড়িমাকে ডেকে আনচি আজি তোমাব এখানে খেয়ে যেতে হবে, পুকুবের মাছ ধবা হয়েছে।" মনীশ দ্রুতপদে পাশেব একটা দ্বাব খুলিয়া বাড়ীব মধ্যে চলিয়া গেল। বন্ধুকে সে অালার নিজেব কাছে ফিবিয়া পাইয়াছে আব তো তাহার মনে এতটুকু ক্ষোভ নাই, মিথ্যা এই ক্লেশকর প্রসঙ্গ চলিতে দিয়া সে প্রেমাম্পদকে পীড়াঙ্কুভব করিতে দিবে কেন ? ছাত্রাবাস প্রত্যাগত আত্মীয় মিলিত স্কুলের ছাত্রেব মত তাহাব বালসবল চিত্ত আনন্দে নাচিয়া উঠিতেছিল । ফিরিয়া সে বন্ধুকে সেখানে দেখিতে পাইল না, ভাবিল বাহিবে গিয়াছে, কই বাহিবেও তো কেহ নাই! অদূবে কামিনী গাছের শাখাপত্র বায়ুভবে স্বনস্বনিয়া উঠিল, সে ভাবিল হয়ত সে তাহাব সহিত কৌতুক করিতে উহারই মধ্যে গোপন হইয়া আছে। নিকটে গিয়া ডাকিল “হয়েচে হে হয়েছে অন্ধকাবে এখানে কেন ?” কই, কাহার প্রতি এ আহবান । কেহ কোথাও নাই। বিস্ময়বেদনায় বিমূঢ় মনীশ তখনও সেই নৈশ অন্ধকাবের তলে প্রতীক্ষাপূর্ণ হৃদয়ে দাড়াইয়া রহিল, প্রতিক্ষণে পত্ৰমৰ্ম্মরে, বায়ুব শব্দে সে সচকিত উৎকর্ণ হইয়া উঠিতেছিল, বুঝি কোন গোপনস্থল হইতে তাহার বন্ধু বাহির হইয়া আসিবে !