পাতা:ভারতী কার্তিক-চৈত্র ১৩২০.djvu/৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

లి , g আততায়ী যেমন অন্ধকারে নিজের শিকারের বুকে ছুরি মারিয়া আতঙ্গস্পদিত পদে ঘরে ফেবে তেমনই করিয়া শচীকান্ত নির্জন পথ অতিবাহিত করিয়া গুহে প্রত্যাগমন করিতেছিল । পল্লীগ্রামে অনেক ঘরের দ্বাব সঞ্চাতেই রুদ্ধ হইয়া যায়, সেই সব রুদ্ধদ্বার অন্ধকার গৃহের কোন একটার মধ্য হইতে কচিছেলের কান্নার শব্দের সঙ্গে সঙ্গে “আয়ুরে যাদু আয়” ইত্যাদি ছেলে ভুলানি ছড়ার অংশতর শোনা যাইতেছিল । কোথাও দুই একুকে দুই, দুই দুগুণে চার” প্রভৃতি পাঠশালার নামত পাঠের বিপুল কলরব শ্রত হইতেছে, কোন স্থান হইতে আবার মহা কোলাহলে কোনালের তীক্ষ শর বর্ষিত হইতেছিল । চলন্ত দুইখানা ট্রেনে যেমন সংঘর্ষ হইয়া পড়ে তেমনিই অনেক সময় রাস্তায় চলিতে চলিতে মামুষে মানুষেও সংঘর্ষ বাধে। উভয় স্থলেই উভয়ের পরিচালক এ দোষেব জন্য দায়ী । মন যখন একেবারে উদভ্ৰাস্ত হইয়া যায় মর্ত্যলোকের কথা তখন মনেই থাকে না । বিশেষ দুইখানা আত্মবিস্মৃত গাড়ির চালক যদি এক পথে বাহির হয় তাহ হইলে তো কথাই নাই। প্রবলবেগে শচীকান্ত এইরূপ অন্তমন একজন পথিকের উপর পতিত হই য়া ক্রুদ্ধ উত্তেজনার সহিত কহিয়া উঠিল “cকরে, কানা নাকি !” দোষী দুজনেই সমান, অপর ব্যক্তিও এই গালি ফিরাইয়া দিতে পারিত কিন্তু সে তাহ। করিল না, আপনাকে পতনবেগ হইতে কোনমতে বাচাইয়। সম্মিতভাবে উত্তর করিল “কান হবার সময় হয়ে এলে বটে কিন্তু বাপু ভারতী কাৰ্ত্তিক, ১৩২০ তুমি তো বৃদ্ধ নও বলেই মনে হচ্চে, যা হোক তোমার লাগে নি তো?” “কে শিবুদাদা না ?” “শচীকান্ত কি ?” আজ্ঞে স্থ্য, মাপ কৰ্ব্বেন । দাদা আমি তাপনীকে চিনতে পারি নি, এত অন্ধকাবে কেন বেড়ান, যদি বেশি ধাক্কাটা লাগতো !” শিবনা বায়ণ কহিলেন “নাহে মনটা বড়ুই উৎকণ্ঠিত রয়েছে কি না, যা eোক আছতে ভাল ?” “হঁ্যা ভালই, মন ভাল নেই কেন বললেন?” “নানান ঝঞ্চট সংসারে, বলে। কেন ? ইচ্ছা করে ছেলেদের হাতে সব বুঝিয়ে দিয়ে বিশ্বনাথের পাদপদ্মে তোমার বাবার চরণতলে আশ্রয় মিই, আমাদের ওখানে গিয়েছিলে ? মনীশের সঙ্গে দেখা হলো ? কেমন দেখলে তাকে ?” শচীকান্ত মনে মনে অত্যন্ত উদ্বেগ অনুভব করিয়া মৃদুস্বরে উত্তর করিল “ভালই তো দেখলাম কেন একথা বলচেন ?” শিবনারায়ণ উত্তর করিলেন না, তিনি যেন কি ভাবিতেছিলেন।" আমায় কিছু বলবেন কি ?” “তোমায় । কই না, কেন বলে দেখি ?” “কে জানে মনে হলো যেন কি বলবেন, কিছু বলবার দরকার নেই তো ?—আচ্ছা তা হলে প্রণাম, বড় শীত, আসি তা হলে ।” শচীকান্ত সবেগে ছুটিয়া চলিয়া গেল । শিবনারায়ণ বিস্মিত দৃষ্টিতে তরল অন্ধকারে ত্বরিতে অদৃশু সেই নিশাচরবৎ অকস্মাৎ দৃষ্ট অদৃশু মূৰ্ত্তির দিকে ক্ষণকাল চাহিয়া থাকিয়া বিষঃ চিত্তে মস্তক আন্দোলন করিয়া আত্মগত কহিলেন “মদ ধরেচে নাকি ? কি পরিতাপ ! দেবতার সন্তান ভূত হইল!”