পাতা:ভারতী কার্তিক-চৈত্র ১৩২০.djvu/৫৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সৌধ-রহস্য চতুর্দশ পরিচ্ছেদ বাহিরের বড় ঘড়িটায় দশটা বাজিয়৷ গেল । বাবা চেয়ার ছাড়িয়া বাহিরের জ্যোৎস্নালোকিত ময়দানেব দিকে চাহিয়া জানালায় দাড়াইয়া পবিতৃপ্ত চিত্তে বলিয়া উঠিলেন, “কি চমৎকার! কি শাস্তির রাজ্য ! ভগবান তোমার এই পরিপূর্ণ প্রসাদম্বধার অমৃতরসে যে বঞ্চিত, সে সত্য সত্যই হতভাগ্য ?” টেবিলের উভয় পাশ্বে এসথার ও আমি বসিয়া ছিলাম, বাবা আমাদের নিকট বিদায় লইয়! শয়ন করিতে চলিয়া গেলেন । বাহিরের তাজা বাতাসে শ্বাস গ্রহণ করিবার জন্ত আমি উঠিয়া হলের বড় দরজাট খুলিয়া দিলাম, সাদা পালতোলা ছোট ছোট নৌকাগুলির মত খণ্ড খণ্ড সাদা মেঘে আকাশ খান ভরাইয়া ফেলিয়াছে। তরল মেঘের ঝালরের ভিতর দিয়া চাদ উঠিতেছিল । বিশ্ব তখন জ্যোৎস্না জলে স্নান করিয়া নিৰ্ম্মল হাসি হাসিতেছিল ৷ হলের সাম্নের দরজার উপর দাড়াইয়া আমি কুমবারের দিকে চাহিয় দেখিলাম। আশ্চৰ্য্য ? জানালীগুলায় আজ আর আলোর চিহু পৰ্য্যস্ত নাই । সেই প্রকাণ্ড টাওয়ার হইতে নীচে পৰ্য্যন্ত কোথাও আলো নাই—অস্পষ্ট মেঘাচ্ছন্ন চন্দ্রালোকের মান ছায়ায় বাড়ীখানাকে যেন একটা প্রকাও শবtধার বলিয়া প্রতীয়মান হইতেছিল। জীবিত মানবের বাসস্থান বলিয়া কোন রূপেই মনে হয় না। স্থপ্তরজনীর নিবিড় নীরবতা আর প্রকাও অন্ধকার বাড়ীখান। ধীরে ধীরে আমাদের উত্তেজিত মস্তিষ্কে দারুণ ভীতির সঞ্চার করিয়া তুলিল । ঘড়িতে বারটা ঘোষণা কবিল । সহসী তাড়িতাহতের মত উঠিয়া আমার হাতটা সজোরে টানিয়া আমার মনোযোগ আকৃষ্ট করিয়া এসথার বলিল, “দাদ শুন্‌চ ?” আমি উৎকর্ণ হইয়া শুনিবার চেষ্টা করিলাম “কৈ —কিছু ত, না ?” কম্পিত স্বরে উত্তর হইল, এদিকে দরজার কাছে এগিয়ে এস, এই বার ? বুঝতে পাচ্চ না একটা মানুষ ছুটে আসচে।” কথা শেষ করিয়াই সে টেবিলের পাশে নত জানু হইয়া বসিয়া পড়িল এবং অঞ্জলিবদ্ধকরে প্রার্থনা করিতে আরম্ভ করিয়া দিল । তাড়াতাড়ি বাহির হইয়া গেটের সম্মুখে আসিয়া দাড়াইলাম—মেঘ সবিয়া গিয়াছিল, নিৰ্ম্মল চন্দ্রালোকে অতিমাত্র বিস্ময়ের সহিত আমি চাহিয়া দেখিলাম, মরডণ্ট ছুটিয়া আসিংেছে! একটা অস্ফুট কাতর চীৎকারের সহিত আমি বলিয়া উঠিলাম “কি হয়েচে ? মরডণ্ট কি হয়েচে ?” সে দাড়াইয় পড়িয়া হাপাইতে হাপাইতে অবরুদ্ধ স্থলিত বাক্যে উত্তব দিল “বাব আমার বাবা ?” তাহার মাথা হইতে টুপিটা কোথায় খুলিয়া পড়িয়া গিয়াছে । মান চন্দ্রালোকে মুখখানি কি ভয়ানক পাণ্ডুর দেখাইতেছিল । চোখ দুইটা যেন ঠিকুরিয়া বাহির হইয় পড়িবে এমনি মনে হইতেছিল। এক রকম টানিয়াই আমি তাহাকে ঘুরে আনিয়া কোমল সোফাখানার