পাতা:ভারতী কার্তিক-চৈত্র ১৩২০.djvu/৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

"bアペ ভারতী ঘণ্ট বাজিয়া গেল। স্কুল বসিল । সমস্ত স্কুল-গৃহের বুক চিরিয়া একটা সুমধুর গুঞ্জনধ্বনি উত্থিত হইল—কৰ্ম্ম-রত মধুকরের গুঞ্জনের মতই তাহা জীবন্ত, সঙ্গীতময় ! ছেলেরা পড়া করিতেছে, পড়া বলিতেছে। বিবজা উন্মাদের মত স্কুলের সম্মুখস্থ পথটায় ঘুরিয়৷ বেড়াইতে লাগিল । ক্রমে এগাবোট, সাড়ে এগারোটা, বারোটা বাজিয়া বাজিয়া দেড়টার সময় টিফিনের ছুটি হইল। ছেলের দল উল্লাসে মাতিয়া স্কুলের বহিঃ-প্রাঙ্গণে ছুটিয়া বাহির হইল । যেন খাচা হইতে পার্থীব দল কে ছাড়িয়া দিয়াছে । তেমনই তাঁহাদেব হৰ্ষোল্লাস । মাৰ্ব্বেল, কপাটি ও লুকাচুরি খেলার ধুম বাধিয়া গেল। এত ছেলে— কিন্তু সেটি কৈ ? কে{থায় সে । সে কি থেটি তে আসিবে না ? তাহকে দেখিবার জন্ত বিরজার প্রাণ যে তৃষিত হইয়া রহিয়াছে ! ঐ না? ছুটিয়া-ছুটিয়া একবাব বাহিবে আসিতেছে, আবার ছুটিয়া ভিতবে পলাইতেছে —পিছনে ছেলের দলও ছুটিয়া চলিয়াছে। সকলে লুকাচুরি থেলি তেছে। ঐ আবার বাহিরে আসিয়াছে। ও কি ? দুইটা ছেলে উহাকে ধরিয়া উহার মাথায় চড় মারিতেছে — ছেলে মাথা গুজিয়া হাসিয়া সে মার খাইতেছে ! ওরে দস্থ্য, ওরে কঠিন, দে, দে, ছাড়িয়া দে, আহt,—কেন মারিতেছিস ! তোদের ও খেলার প্রহারে এখানে বিরজার বুকে যে মুগুরের ঘা পড়িতেছে। ওরে দেখ, দেখ, বাছার মুখখানি রাঙা হইয়া উঠিয়াছে ! স্কুলের ছুটির পর ছেলেরা বাড়ীর পথে ফিরিল ; বিরজাও পিছনে চলিল ! এ কি কাৰ্ত্তিক, ১৩২০ এ আকর্ষণের প্রভাব এত দিন বুঝে নাই ! ছেলে ! সে যে কি রত্ন, বিরজা তাহ পূৰ্ব্বে বুঝে নাই,-আজ বুঝিয়াছে। বুঝিয়াছে বলিয়াই এটিকে সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখিবার জন্ত আজ এতখানি অধীর আকর্ষণ ! বিরজা কেন তাহাব এমন আকুলত, আগ্রহ ! এমনই ভাবে ছেলের পিছনে, বাড়ীর আশে-পাশে ঘুরিয়া বিরজার দুই দিন দুই রাত্রি যে কোথা দিয়া কাটিয়া গেল, তাহা সে জানিতেও পাবিল না । সকালে পথে দাড়াইয়া বিবজা জানালার ফাক দিয়া নীচেকার ঘবেব মধ্যে আপনার ক্ষুব্ধ নয়নের আকুল দৃষ্টি প্রেরণ করিতেছিল । ছেলেরা মাষ্টার মহাশয়ের কাছে বসিয়া পড়িতেছে—তাব্দীর ধরিতেছে, দুষ্টামি করিতেছে,—বিরজা তাহাই দেখিতেছিল ! হায়, এমন স্বর্গ, এমন মুখ, এ ত তাহারও অনায়াস-লব্ধ ছিল, নিজের দোষে ধূলার মতই সে তাহা তুচ্ছ করিয়া ফেলিয়া দিয়াছে। আজ শত চেষ্টায় সহস্ৰ সাধনায় এ স্বর্গের একটি কোণেও আর তাহার দাড়াইবার অধিকার নাই ! হঠাৎ একটা কঠিন কণ্ঠ-স্বরে তাহার চমক ভাঙ্গিল, “– কে ?” বিরজা চোখ ফিরাইয়া দেখে, গৃহ-দ্বারে ও,– কে ও ! ভয়াৰ্ত্ত শিশুর মত সে দূরে পলাইয়া গেল-- সেখানে দাড়াইয়া সে মুখের পানে একবার ফিরিয়া চাহিবারও তাহার সামর্থ্য হইল না । তবুও এ বাড়ীর মায়া, দেখিবার বাসন কিছুতেই মিটিবার নয়। দৈত্যের মায়াপুণীর, মতই এই বাড়ীখানা বিরজার পায়ে এক দুশ্চেষ্ঠ নিগড় আঁটিয়া দিয়াছিল। এক