পাতা:ভারতী কার্তিক-চৈত্র ১৩২১.djvu/৪৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বসন্তের কথা শীতাকাশে ধূসর মানিমা আর নাই। দিকৃচক্রবাল অন্তরাল করিয়া কুয়াশার যে ঘন যবনিকা আমাদের উৎসুক দৃষ্টিরোধ করিতেছিল তাহাও অন্তৰ্দ্ধান। প্রকৃতি যোগনিদ্ৰাহত ছিলেন তাই জীবনের গতি যেন স্থগিত ছিল ; উৎসরাজির কলসঙ্গীত হিমানী-ব্যাঘাতে নিস্তব্ধ, স্রোতস্বিনীর স্নোতধারা শ্রান্ত মন্থরগতি, ম্রিয়মানপ্রবাহ, পত্রহীন রিক্ত তরুসমূহ মৰ্ম্মর গান ভুলিয়া মুক হইয়াছিল। গায়ক বিহঙ্গকুল দূরান্তর প্রবাসে ; আশার কাকলি আর কে শোনায় ? অন্তরে বাহিরে মৌন প্রতীক্ষা বিরাজ করিতেছিল । পৌষ মাঘে যে রসসৌন্দৰ্য্যধারা ফন্তুর দ্যায় অন্তরবাহিনী ছিল, ফাঙ্কনে আজ তাহ দিকে দিকে উৎসারিত ; ধূসর আকাশের ক্লান্ত দৃষ্টি আনীল অপরাজিতার স্নিগ্ধ বর্ণে নয়ননন্দন, নবপল্লবশোভিত বন প্রান্তর মৰ্ম্মর গানে মুখর, পিক পাপিয়ার ঝঙ্কারে আনন্দময়, "াম-পত্রাস্তরে • কুস্কমমুষম বর্ণবৈচিত্র্যে নব বসন্তের অভু্যদয় প্রচার করিতেছে, বৎসরের এই প্রভাত কাল, এই তরুণ কৈশোর অরুণ পুষ্পের লাবণ্য বহিয়া আনে, তাই আজ অশোক কিংশুকের প্রভাব, বলভদ্রের মদবিহবল নেত্রের মত অরিক্ত পুষ্পসম্ভারে পথের দুইধারে বলরামচুড়ার বাহার। এ যে শীতাপগমে প্রকৃতির প্রথম জাগরণ, তাই অরুণোদয়ের বর্ণমৗধুরী তাছার অঙ্গরাগে প্রোজ্জল হইয় ওঠে। তরুরাজির মাজ তাহার আঙ্গিয়া আবীরে কুঙ্কুমে লালে লাল ৷” শ্রীপঞ্চমীতে অলকে নব চুতমঞ্জরী দোলাষ্টয়া, পীত উত্তরীয়াঞ্চলে বিকাশোন্মুখ তযু অঙ্গযষ্টি আচ্ছাদন করিয়া বাসন্তী লক্ষ্মী আসিয়া দেখা দেন। চারিদিকে পূজার আয়োজন পড়িয়া যায়, নবমালতী কুমুম বিকাশ চেষ্টায় উংস্থক হইয় তাহার কোর কাবলিকে বিদীর্ণ করিয়া দেয়, চারিদিকে কুঞ্চিত দৃল ছড়াইয়া পড়ে, সৌরভে দিক্‌প্রাঙ্গণ প্লাবিত হইয়া যায়। আম্রশাখার প্রবালরক্ত-কিশলয়ের ‘পাশে পাশে মুখ রাখিয়া শুক-বক্ষ-পীতবর্ণ নব মুকুল ফুটিয়া ওঠে, মুগন্ধের মৌন মধুর স্বাগত জানাইয় তাহারা মুখর কলকণ্ঠ পিক-বৈতালিক দলকে আবাহন করিয়া আনে, প্রহরে প্রহরে আনন্যের নহবৎ বাজিতে থাকে । সে সাড়ায় বনানীর তোরণাবলীতে তারক্ত পুষ্পস্তবক প্রস্ফুটিত হয়, অশোক পলাশ কিংশুক অগ্নিরাগপ্রভায় অহোরাত্রি হোমাগ্নি জালাইয়া রাখে, বর্ণে গন্ধে গীতে পূজার আয়োজন সম্পূর্ণতা প্রাপ্ত হয়। শরতের শেষ-দিনগুলির সহিত এই নবীন বসন্তের বড় একটি সাদৃশু আছে, আকাশ তেমনি অপার মুনীল বর্ণ, স্বচ্ছ উজ্জ্বল; মেঘলেশহীন, বসন্তের প্রারম্ভে পল্লবসজ্জা তখনও সম্পূর্ণ পৰ্য্যাপ্ত হয় না, প্রায় শেষ শরতে তাহার সব পার্তাগুলি তখনও ঝরিয়া যায় না ।