পাতা:ভারতের রাষ্ট্রনীতিক প্রতিভা - অরবিন্দ ঘোষ (১৯২৫).pdf/৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪
ভারতের রাষ্ট্রনীতিক প্রতিভা

 অন্যপক্ষে, বুদ্ধি যখন এইভাবে জীবনের উপাদানের উপরে একমাত্র নিয়ন্তা হইবার দাবী করে, তখন সে দেখিতে চাহে না যে, সমাজ একটা জীবন্ত জিনিষ, জীবন্তভাবে ইহার বিকাশ হইতেছে। পরন্তু দেখে, উহা যেন একটা জড় যন্ত্র,—তাহাকে ইচ্ছামত পরিচালিত করিতে পারা যায়, ইট, কাঠ বা লোহার ন্যায় প্রাণহীন জড়পদার্থের মত বুদ্ধির খেয়াল অনুসারে গড়িয়া তোলা যায়। বুদ্ধি বেশী কূটতর্ক ও কল্পনাজাল রচনা করিতে গিয়া, যন্ত্রবৎ দক্ষতা খুঁজিতে গিয়া, জাতির জীবনের সহজ সূত্রগুলি হারাইয়া ফেলে; জাতির জীবনীশক্তির যে নিগূঢ় উৎস, তাহার সহিত যোগসূত্র ছিন্ন করিয়া ফেলে। ইহার ফল হয় এই যে, বাহ্য অনুষ্ঠান ও পদ্ধতির উপরে, আইনকানুন ও শাসনপ্রণালীর উপরেই অত্যধিকভাবে নির্ভর করা হয় এবং জীবন্ত জাতির পরিবর্ত্তে এক যন্ত্রবৎ রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান গড়িয়া তুলিবার দিকেই মারাত্মক ঝোঁক আসে। যাহা সমাজ-জীবনের একটি সহায় বা যন্ত্রমাত্র, তাহাই ঐ জীবনের স্থান গ্রহণ করিতে চেষ্টা করে এবং এইভাবে একটি শক্তিশালী কিন্তু যন্ত্রবৎ ও কৃত্রিম সংগঠন (organisation) সৃষ্ট হয়; কিন্তু বাহিরের দিকে এই যে লাভ হয়, তাহার মূল্যস্বরূপ মুক্ত ও সজীব জাতির শরীরে নিগূঢ়ভাবে আত্মবিকাশশীল