বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:ভারত কোন্‌ পথে? – বারীন্দ্রকুমার ঘোষ (১৯৩৬).pdf/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

শুভ মুহূর্ত্ত

করিয়া মহাত্মাজী ও নেতৃদল অবসন্ন। ভারতের 'জাতীয় আন্দোলনে ভিক্ষা এখনও ঘুচে নাই, রূপ বদলাইয়াছে মাত্র; একদিন মধ্যপন্থীর হাতে যাহা পোষাকী রাংতার বজ্র ছিল, আজ তাহা শক্তির বরপুত্রের হাতেও অশোভন হয় নাই, বরঞ্চ বিদ্যুদগর্ভ অস্ত্রে রূপান্তরিত হইয়াছে। ভিক্ষা সকল সমর ভিক্ষা নয়, বামনও বলী রাজার কাছে ত্রিপাদভূমি ভিক্ষা করিয়াছিল; আয়লর্ণ্ডও নরম কস্গ্রেভী দলের সহায়তায় জাতীয় গভর্ণমেণ্ট গড়িতে সমর্থ হইয়াছে। তাহার পর আসিয়াছেন ডি’ভ্যালেরা।

 ইংরাজ ও ভারতের সম্বন্ধ কাল বিজেতা বিজিত ছিল বলিয়া আজ বা চির দিন তাহা সেইরূপই থাকিবে না। যে পরিমাণে ভারত শক্তি পাইয়া বাঁচিয়া উঠিবে সেই পরিমাণে কালকার শত্রু আজকার মিত্রে ও সহকর্ম্মীতে পরিণত হইবে—হইতেছেও তাহাই। দুই পরাক্রান্ত জীবন্ত জাতির প্রকৃত সম্বন্ধ বৈরিতা নহে, সহকর্ম্মিতা! মানুষ মানুষকে ধরিয়াই বাঁচে, পরস্পরকে ধরিয়াই সফল ও সার্থক হয়। প্রেমই চিরজয়ী, শক্তির মহামন্ত্রই প্রেম। স্বার্থের দ্বন্দ্বে, বিরোধে, মতান্তরের অন্ধকারের বুকে মানুষের মহাপ্রেমের ঊষাই জাগিতেছে। এক দিন তাহা প্রকট হইবেই।

 শান্তির দূত মহাত্মাজীর বাণী এবং মন্ত্র ব্যর্থ হইয়াছে, তাহার কারণ হিংসার ক্ষেত্রে বপিত হইয়াছিল অহিংসার বীজ, অসহযোগের চাপে ও বেদনায় রূপ লইতেছিল সহযোগের প্রয়াস। আজ বুঝি দিন আসিতেছে স্বদেশী এবং বিদেশীর বুকের যত অপ্রেম, দ্বন্দ্ব, বিদ্বেষ ও সন্দেহের বিষ অমৃতে রূপান্তর করিবার। সব দিক দিয়া মানব সভ্যতার রথ অচল হইয়াছে, সারা জগৎ জুড়িয়া উঠিয়াছে অভাব, দারিদ্র্য, হিংসা ও বেদনা; আজ তাই শুভক্ষণ আসিয়াছে এক নবীন প্রেমের অপ্রতিদ্বন্দ্বী দেবতার,― নব বাণীর, নূতন মন্ত্রের, নবতর কর্মপন্থার। এই কথা বলিতেই এই ক্ষুদ্র পুস্তকের অবতারণা।

শ্রীবারীন্দ্র কুমার ঘোষ।