বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:ভারত কোন্‌ পথে? – বারীন্দ্রকুমার ঘোষ (১৯৩৬).pdf/১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ভারত কোন্ পথে?

সে ছুটে চলে বনের কোলে কোলে লুব্ধ গৃধনু শ্রীরামচন্দ্রকে ভুলিয়ে নিয়ে রাক্ষসকে সীতাহরণ করবার অবসর দেবার জন্যে। শ্রান্ত অধীর স্বেদসিক্ত রাম যখন বাণের মুখে বিঁধে সে মায়াহরিণকে মারে, জয়োল্লাসে এগিয়ে গিয়ে ধরে, তখন অট্ট হেসে সে মায়া বলে যায় তার ছলনার কথা। এই হচ্ছে মানুষের করুণ ট্র্যাজেডি-তার মুক্তি রচনার ব্যর্থ ইতিহাস, তার অশ্রুর মহাকাব্য।

 কি ব্যাকুল কি পাগল তার সে চাওরা! কত সমাজ, কত রাষ্ট্র, কত ধর্ম্ম—কত অপূর্ব্ব মায়াপুরী মানুষ গড়েছে, ভেঙেছে, আবার নতুন করে অভিনব করে গড়েছে,—কত না আশার আশায়, কত না ক্রুদ্ধ ক্ষুব্ধ ব্যর্থ নিরাশায়। এক একবার যুগান্তের বিপুল প্রয়াসে কঠিন দৃঢ় করে গড়া ভাবের তাজমহল—আদর্শের স্বর্ণকিরীটিনী লঙ্কা ভাঙতে মানুষের রক্তে বসুধা পিছল হয়েছে, শবের পাহাড় গড়েছে, নারী-মেধ শিশু-মেধের ধোঁয়ায় নির্ম্মল আকাশ করেছে মলিন। আবার কত সার আকাঙ্ক্ষার তীব্র ব্যাকুলতা নিয়ে স্বপ্নালু মানুষ কোমর বেঁধে লেগে গেছে নব সৃষ্টির গলদ্‌ঘর্ম্ম প্রয়াসে—নতুন সমাজ গড়তে, অভিনব রাষ্ট্র রচনা করতে, মহানতর মুক্তির ধর্ম্ম আনতে। মুক্তি তার যে না হ’লেই নয়, বাঁধন তাকে যে বেদনা দেয়, সব দিক দিয়ে ব্যর্থ করে তোলে; জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে, দেহ মন প্রাণের প্রতিটি ক্ষুধায়, অন্তর বাহিরের সব বিকাশে, সকল রূপ নেওয়ায়, ফোটায় তার যে চাই অবাধ অধিকার। নিজের জীবন নিয়ে নিজের খেলাটি খেলা, নিজের মনের মত করে বেঁচে থাকা— freedom to live one's own life, এই হচ্ছে তার সব চেয়ে বড় বেদনা, সব চেয়ে বড় কামনা, সব চেয়ে বড় অধিকার। অথচ এইটুকু নিয়ে কত টানাটানি, কত কাটাকাটি, কত দলন, পীড়ন, বিপ্লব, বিদ্রোহ, যুদ্ধ, নরহত্যা!