ভারত কোন্ পথে?
খুঁজে নিতে হবে; এবং সে পথ যেন এবার নিছক ভাববিলাস না হয়, ফাঁকা ব্যর্থ জাতি-বিদ্বেষ ও উত্তেজনা না হয়, সে দিকে লক্ষ্য রেখেই এবার সে পথ নির্ব্বাচন করতে হবে।
সুরেন্দ্রনাথ তিলক, অরবিন্দ, চিত্তরঞ্জন, মহাত্মা গান্ধীর মত নেতাদের আমরা পূজা করি সত্য, কিন্তু তাঁদের প্রদর্শিত পন্থা সম্বন্ধে অন্ধ হ’লে চলবে না। ভারতের জীবন-গতির তাঁরা এক একটি পদক্ষেপ, এই জাতীয় জীবন জাহ্নবীর এক একটি তরঙ্গ মাত্র। নেতা আসে যায় কিন্তু ভারতের উন্নতির ও পরিণতির জীবন-যজ্ঞ অনির্ব্বাণ শিখায় দাউ দাউ করে জ্বলে, এ ব্রতের উদযাপন নাই, সমাপ্তি নাই। কখন অগ্ন্যুৎপাতে, কখন স্থির শিক্ষায় এ জীবনবহ্নি জ্বলতেই থাকবে যতক্ষণ না মানুষে মানুষে এক মহান প্রেমমৈত্রীর অখণ্ড রাজ্য গড়ে ওঠে। ভারতের স্বাধীনতা বিশ্বের কল্যাণের এক মহামন্ত্র নিয়ে উঠবে, তাই এদেশে শ্রীরামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ জন্মেছিল, তাই এই নিগড়বদ্ধা দেশজননীর কোলে এসেছেন দেশবন্ধু, তিলক, মহাত্মা গান্ধী, শ্রীঅরবিন্দ। মানুষের তপ্ত রক্তে ললাটে রাজতিলক এঁকে ধনীর সাম্রাজ্য গড়বার জন্য ভারত ওঠে নাই। রাজসিক জীবনের ভোগোপচারে সমৃদ্ধ বাহুবলদৃপ্ত সিংহাসন অর্দ্ধপৃথিবী জুড়ে শক হুন মোগল পাঠান ও পাশ্চাত্যের জাতিরা বার বার গড়েছে। তাতে মানুষের বেদনা ও বন্ধন বেড়েছে বই কমে নাই। সেই রাজসিক রাজসূয় যজ্ঞের পুনরাবৃত্তিই ভারতের লক্ষ্য হতে পারে না।
পরাধীনতার বেদনায় ক্লিষ্ট অসহিষ্ণু আমাদের ধারণা হয়েছে, রাগ জিঘাংসা ও জাতিবিদ্বেষের ইন্ধন ছাড়া বুঝি জাতির জীবন-যজ্ঞ পূর্ণ হয় না, দেশের মুক্তি আসে না। অতীত ইতিহাসের প্রত্যেক পৃষ্টা নররক্তে নিসিক্ত বলে তোমাদের মনে হচ্ছে এখানেও বুঝি বামা—কালীর মরণ নৃত্যের পুনরভিনয় হবে। স্থির চিত্তে ভারতের জীবন ও ইতিহাসের
১৪