ব্রিটেন ভারতের কি করেছে?
উপকরণ জুগিয়েছে, সে বিচার উগ্র একদেশদর্শী জাতীয়তার চোখে দেখে বিচার করা শক্ত। প্রবল অন্ধ স্বজাতি-প্রীতি ও গোষ্ঠীজ্ঞান মানুষের দৃষ্টি বিকৃত করে, বিচার বুদ্ধির তীক্ষ্ণতা নষ্ট করে দেয়। কারণ দেশপ্রীতি হচ্ছে হৃদয়ের ভাব, হৃদয়ের ভাবে আছে অন্ধ প্রবল আবেগ ও গতি, যুক্তি ও বিচারের আলো সেখানে নাই। ভাব ভাল জিনিস কিন্তু ভাবই মানুষের সব নয়, মানুষের মত জাতিরও হৃদয় ছাড়া আরও আছে মন, বুদ্ধি, প্রাণ ও দেহ। নিছক ভাব বা দেশপ্রীতি তাই খণ্ড সত্যমাত্র, জীবনের পূর্ণ সত্যকে তা’ তখনই সফল করতে পারে যখন হৃদয়ের খেলা অতিমাত্রায় বেড়ে মনকে আচ্ছন্ন করে না, দেহ ও প্রাণের অভাব অভিযোগকে বিস্মৃত হয় না। বাঙালী অতিমাত্রায় ভাবপ্রবন হয়ে জীবনের যাত্রায় প্রতি পদে সকল জাতির নিকট পরাস্ত হয়েছে। বাঙালীকে সর্ব্বাগ্রে শিখতে হবে স্থির বিচারবুদ্ধির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত গতি।
যুগ-দেবতা বা জাতির জীবন-দেবতা তার নিগূঢ় বিধানেই ইংলণ্ড ও ভারতের মিলন ঘটিয়েছে, তার পিছনে আছে এক অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য। আমাদের যে কোন ক্ষুরধার-বুদ্ধি নেতার অপেক্ষা, যে কোন সাময়িক জাতীয় আন্দোলনের চেয়ে এই যুগদেবতার প্রেরণা ও গতি অভ্রান্ত ও পরিণামে সুফলপ্রসূ। ভারতের মত একটা বিশাল মহাদেশ ও জাতিপরিবারের ভাগ্য বিপর্য্য়য়ের জন্য, সুখদুঃখের জন্য কোন বিশেষ ব্যক্তি বা জাতিকে দায়ী করা নিরর্থক। তার ব্যর্থতা ও পতন, তার রাজনীতিক ক্ষতি বৃদ্ধির কারণ এক নয় বহু, শুধু বাহিরের নয়, অন্তরেরও। ভারতের জাতীয় জীবনের এই উত্থান পতন এ হচ্ছে তার জীবন-দেবতার এক একটি পদক্ষেপ, এই বৃহৎ জাতিগোষ্ঠীর সুখদুঃখ বেদনা বন্ধন হচ্ছে সেই জীবন-শিল্পীর হাতুড়ীর ঘা’—যাতে করে মানব-প্রগতির এক পূর্ণ পরিণতির ছন্দে তার ভাগ্য-দেবতা ভারতকে নিপুণ অভ্রান্ত হস্তে গড়ে
২৫