বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:ভারত কোন্‌ পথে? – বারীন্দ্রকুমার ঘোষ (১৯৩৬).pdf/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ভারত কোন্ পথে?

তুলছেন। প্রত্যেকটি পরাজয়, প্রতি বৈদেশিক অভিযান ও কৃষ্টির পরাভব ও খণ্ড-গ্রাস ভারতের জীবন রাগিণীকে এক অপূর্ব্ব ঐকতানে ও ছন্দে পূর্ণ থেকে পূর্ণতর করে তুলছে। তার অদৃষ্টের তরঙ্গিত গতি তাকে দিয়েছে ও দিন দিন দিচ্ছে অধিকতর যোগ্যতা—নিজের আদর্শকে ফুটিয়ে ফলিয়ে সার্থক করে তোলবার জন্য। ভারতের সে আদর্শ নিছক রাজনীতিক স্বরাজ নয় কিন্তু মানবজাতির মুক্তি—‘তার স্বারাজ্য’। ভারতে এতগুলি জাতি, ধর্ম্ম, আচার ও ক্বষ্টির সমন্বয় করতে গিয়ে আমরা যে মহানতর ব্যাপকতর জাতীয়তা বা ন্যাশনালিজম্‌ক গড়ে তুলছি তা’ এদেশের নিছক রাজনীতিক মুক্তি নয়, একথা যে কোন চিন্তাশীল ব্যক্তি না স্বীকার করে পারবেন না। এ সত্য যে ভারতের মূল জীবন-সত্য ও ইতিহাস প্রতিপাদ্য বস্তু।

 য়ূরোপ ও অন্যান্য মহাদেশে যে পরীক্ষা যে চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে—সঙ্কীর্ণ অনুদার খণ্ড খণ্ড জাতীয়তার অভ্যুত্থানে, ভারতে বিধাতার ইঙ্গিতে সজ্ঞানে হোক অজ্ঞানে হোক ব্রিটিশ শক্তির হাতে সেই মহতী চেষ্টা চলেছে। এ মহাব্রতের উদ্‌যাপন না হ’ওয়া অবধি ইংলণ্ডের ছুটি নাই, ভারতের মুক্তি নাই। য়ুরোপে কিন্তু এত দেশ এত জাতি থাকতে একাজের জন্য ইংরাজই বা প্রেরণা পেল কেন, প্ররোচিত হ’লো কেন? কারণ তাদের স্বভাব ও প্রকৃ্তিতে, তাদের গুণে ও সামর্থ্যে তারাই তখন ছিল যুগশক্তির হাতে এই উদ্দেশ্য সাধনের পক্ষে উপযুক্ত যন্ত্র ও উপকরণ। ভাবপ্রবণ ও তরলপ্রকৃতি ফরাসী জাতি এত বড় লক্ষ্য পথে ভারতের নিয়ামক হতে পারতো না, তাই এদেশ গ্রাস করতে করতে তারা পরাস্ত হয়েছিল। জার্ম্মান জাতি তাদের অতি—মাত্রায় নিয়মতান্ত্রিক কঠিন অনমনীয় মন নিয়ে এতবড় সামঞ্জস্য ও সমন্বয়ের কাজে নিশ্চয়ই অপারগ হ’তো। তাদের অধিকৃত উপনিবেশে কোথায়ও তারা কোন স্বতন্ত্র সবল

২৬