ব্রিটেন ভারতের কি করেছে?
জাতীয়তার প্রাণ-প্রতিষ্ঠা করতে আজও পারে নাই। বহু শতাব্দি ধরে জার বংশের যথেচ্ছাচারী শাসনে নিষ্পিষ্ট রুষ জাতি এ ভার পেলে হয়তো মুক্তির নামে নবতর শৃঙ্খলেরই রচনা করতো—মানুষের এত রকম বৈচিত্র্যকে অক্ষুন্ন রেখে মুক্তিকে বিগ্রহ দিতে রূপায়িত করতে গিয়ে তারা ব্যর্থ-ই হতো। বৃটিশ জাতি তাদের স্বাভাবিক মুক্তিপ্রিয়তা ও ন্যায়নিষ্ঠায়, তাদের ধীর একাগ্র হিসাবী মন নিয়ে, তাদের সুশৃঙ্খল কর্ম্ম ও গঠন-প্রবণতায় একাজের উপযুক্ত আধার ও যন্ত্র সে বিষয়ে সন্দেহ কি? ভারতের স্বরাজ—যা’ বহু জাতি, বহু ধর্ম্ম ও বহু ভাষা এবং আচারের সমন্বয় ছাড়া আর কিছুই নয়, তা গড়বার জন্য চাই কতখানি ধৈর্য্য ও নিপুণ একাগ্র কর্ম্ম-প্রবণতা সে কথা সহজেই অনুমেয়। আজ রাজনীতিক হিসাবে ইংরাজ আমাদের বিজেতা ও শাসক বলে আমরা তাদের প্রতি বিরূপ; নহিলে এই উগ্র জাতীয়তার মোহ মুক্ত হয়ে সম বিচারশীল দৃষ্টিতে দেখলে বোঝা যায়, ইংরাজ ছাড়া ইউরোপের আর কোন জাতিই কোন দেশকে বাহির থেকে পরাধীন করেও তার আত্মাকে—তার অন্তর্নিহিত মনুষ্যত্বকে এমন করে জাগিয়ে দিতে পারে নাই। এটা যে ইংরাজ সব সময় সবটুকু সজ্ঞানে করেছে তা নয়; তাদের জীবন্ত রাজসিক প্রকৃতিই এইরূপ, যে, তাদের জীবনদায়ী স্পর্শে বাংলার ও পরে ভারতের ধর্ম্ম, সাহিত্য, কলা, জ্ঞান, বিজ্ঞান ও রাজনীতি সমস্তই মুঞ্জরিত পুষ্পিত পল্লবিত হয়ে উঠেছে। মোগল সাম্রাজ্যের অধঃপতনের যুগ আরও দীর্ঘ হ’লে, পাশ্চাত্যের জীবনদায়ী স্পর্শ শীঘ্র না এলে এ জাতি ও এদেশ পতনের ও অবনতির আরও গভীরতর গহ্বরে প্রবেশ করতো সে বিষয়ে সন্দেহ কি? ইতিহাসই তার জ্বলন্ত সাক্ষী।
আফ্রিকা ও আমেরিকায় ইউরোপ ও ইংলণ্ডের জন্য যে কাজ বিধিনির্দিষ্ট হয়ে ছিল, সেখানে যে জাগরণ আনবার ছিল, ভারতে প্রারব্ধ
২৭